—প্রতীকী ছবি।
প্রাথমিকে অবৈধ ভাবে চাকরি পাইয়ে দিতে ‘অশুভ আঁতাঁত’ গড়ে তুলেছিলেন কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডলেরা! অবৈধ ভাবে চাকরি পাইয়ে দিয়ে বিপুল অর্থও সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা। গড়ে তুলেছিলেন বিশেষ এক চক্র। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়ে এমনটাই দাবি করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তদন্তে কী উঠে এসেছে, তা-ও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করেছে তারা।
গত মঙ্গলবারই সিবিআইয়ের কাছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের রিপোর্ট তলব করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। মঙ্গলবার সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। ওই রিপোর্টে সিবিআই দাবি করেছে, অবৈধ ভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের মালিকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন তাপস এবং তাঁর ‘এজেন্ট’রা। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাপস এবং তাঁর আট জন এজেন্ট মিলে ১৪১ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে মোট ৪ কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তলকেও ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তাপস। এ ছাড়া কুন্তল নিজেও ওই সময়ে ৭১ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা তুলেছিলেন বলে সিবিআইয়ের রিপোর্টে রয়েছে।
আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এ-ও দাবি করেছে, টেট-এ ফেল করেছেন এমন প্রার্থীদের যোগ্য প্রমাণ করতে ভুয়ো ওয়েবসাইটও তৈরি করেছিলেন তাপস-কুন্তলেরা। অবিকল আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে ছিল সেই ভুয়ো ওয়েবসাইট। এমনকি, দুর্নীতি যাতে নজর এড়িয়ে যায়, সে জন্য অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের ভুয়ো ইমেল আইডি থেকে মেল পাঠিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হত। কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ওএমআর শিট মূল্যায়নের দায়িত্ব ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি’কে দেওয়া হয়েছিল বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৭৫২ জনের চাকরিপ্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেকেই অযোগ্য। তার পরেও ওই ৭৫২ জনের মধ্যে ৩১০ জনকে চাকরি দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রাথমিকের ওএমআর শিট সংক্রান্ত মামলাগুলি শুনেছিলেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ইস্তফা দেওয়ায় মামলাগুলি বিচারপতি মান্থার এজলাসে যায়। গত মঙ্গলবার বিচারপতি মান্থাকে সিবিআই জানিয়েছিল, তদন্তে তারা জানতে পেরেছে, ৩০৪ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত চার্জশিট এবং অতিরিক্ত চার্জশিট ফাইল করা হলেও চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়া হয়নি। যার জবাবে বিচারপতি জানান, এই মামলায় সিবিআইয়ের অনেক রিপোর্টই এজলাসে আসেনি। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ওই সব রিপোর্ট এজলাসে পাঠানোর ব্যবস্থাও করতে বলেন বিচারপতি মান্থা। তিনি গত মঙ্গলবার সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ওএমআর শিটের আসল তথ্য খুঁজে বার করতে হবে। ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কোথায় রয়েছে, তার সন্ধান করতে শুরু করুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে অতিরিক্ত রিপোর্ট দিয়ে সংক্ষেপে জানাতে হবে, নিয়োগে কী ভাবে হয়েছিল? কোথায় দুর্নীতি হয়েছে।’’ বিচারপতির নির্দেশে সেই রিপোর্টই মঙ্গলবার আদালতে জমা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।