রবিবার বিকেলে নবান্নে সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছে রাজ্য পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
অন্তরালে থাকা রাজীব কুমারের হদিশ জানতে চেয়ে তাঁর ঊর্ধ্বতনদেরই চিঠি দিল সিবিআই। রবিবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দফতর থেকে তিন সিবিআই আধিকারিক সোজা নবান্নে পৌঁছন তিনটি চিঠি নিয়ে।
তাঁদের হাতে থাকা তিনটি চিঠি রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং মুখ্যসচিবের উদ্দেশ্যে লেখা। বেলা ৫টা নাগাদ তাঁরা নবান্নে পৌঁছন। প্রায় ১০ মিনিট নবান্নের মূল দরজার সামনে অপেক্ষা করার পর, রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক সেখানে পৌঁছন। সিবিআই আধিকারিকদের নবান্নে পৌঁছনোর কারণ শুনে তাঁদেরকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ফেরার পথে ওই আধিকারিক বলেন, ডিজি-র চিঠি নবান্ন এ দিন গ্রহণ করেছে। বাকি দু’টি সোমবার দেওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে নবান্নের তরফে। কী বিষয়ে ওই চিঠি, তা নিয়ে মুখ খোলেননি ওই সিবিআই আধিকারিক। তবে সূত্রের খবর, রাজীবকে বাগে পেতে এবার তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেই ওই আধিকারিকের হদিশ জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
আরও পড়ুন: রাজীবের ঘাড়ে সিবিআইয়ের নিশ্বাস! অন্তরালে থেকে কি এড়াতে পারবেন গ্রেফতারি?
শুক্রবার দুপুর পৌনে ৩টে। কলকাতা হাইকোর্টে রায় ঘোষণা করলেন বিচারপতি মধুমিতা মিত্র। রাজীব কুমারের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে বহাল আইনি রক্ষাকবচ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।
রায় ঘোষণার দু’ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য পুলিশের ওই শীর্ষ পুলিশ কর্তার সরকারি বাসভবন ৩৪ পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছয় সিবিআই দল। শনিবার তাঁকে সিবিআই দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য সমন হাতে নিয়ে। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি তাঁর দোতলার ফ্ল্যাটে। তাঁর ফোন এবং দেহরক্ষীর ফোন নম্বর যা এর আগে তিনি সিবিআইকে দিয়েছিলেন (কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে)— কোনওটাতেই তাঁকে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানা গিয়েছে সিবিআই দফতর থেকে। তখন থেকেই তিনি অন্তরালে।
শনিবার তিনি সিবিআই দফতরে হাজিরা দেননি। বরং তিনি ইমেল পাঠিয়ে জানিয়েছিলেন যে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। ২৫ সেপ্টেম্বরের আগে তাঁর সিবিআই দফতরে যাওয়া সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: ‘দেশে চাকরি আছে, উত্তর ভারতের প্রার্থীদের যোগ্যতা নেই’, বিতর্কিত মন্তব্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
সিবিআই সূত্রে ইঙ্গিত, রাজীবের ওই ইমেলকে হাতিয়ার করেই এগোতে চান তাঁরা। এক সিবিআই আধিকারিকের ইঙ্গিত, একজন অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার আধিকারিক ছুটি নিলে তাঁর সেই ছুটি মঞ্জুর করবেন ডিজি। সেই ছুটির কথা জানবেন মুখ্য এবং স্বরাষ্ট্র সচিবও। তাহলে তাঁদের কাছে রাজীব কুমার সম্পর্কে তথ্য থাকবে।
ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, একজন শীর্ষ আইপিএসের সার্ভিস রুল অনুযায়ী, আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয় তিনি ছুটির সময়ে কোথায় থাকবেন। কোন ফোন নম্বরে তাঁকে পাওয়া যাবে। কারণ যে কোনও সময় প্রয়োজনে তাঁকে ছুটি বাতিল করে ফিরে আসার নির্দেশ দিতে পারে সরকার। ফলে যোগাযোগ করার জন্য ওই যোগাযোগের নম্বর এবং ঠিকানা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। কয়েক মাস আগে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এই মর্মে একটি সার্কুলারও ইস্যু করেছেন। সেই সার্কুলারেও রাজ্যের সমস্ত আইপিএস-কে সমস্ত ভাবে বলা হয়েছে, তাঁরা ছুটিতে গেলে বা ‘স্টেশন লিভ’ করলে সেখানকার ঠিকানা এবং যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর জানিয়ে যেতে হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।
সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্তাকে দেওয়া চিঠির সঙ্গে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের কপি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের জানানো হয়েছে যে সিবিআইয়ের তরফ থেকে রাজীব কুমারকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ করা যায়নি। সেক্ষেত্রে ছুটিতে থাকাকালীন তাঁকে কোন ফোন নম্বরে এবং কোন ঠিকানায় পাওয়া যাবে?
আরও পড়ুন: মন্দার কোপ মাহিন্দ্রায়, গাড়ি উৎপাদন বন্ধ হতে পারে ১৭ দিন পর্যন্ত
সিবিআই সূত্রে খবর, এ প্রসঙ্গেই ওই চিঠিতে রাজীব কুমারের ছুটির বিষয়েও বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তিনি কবে ছুটির আবেদন করেছিলেন? কী কারণে কত দিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন।
সিবিআই সূত্রে ইঙ্গিত, রাজীব কুমার অন্তরালে থাকলেও ক্ষতি নেই। এ বার তাঁর ঊর্ধ্বতনদের দায়িত্ব তাঁর হদিশ দেওয়া। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ চিঠির উত্তর না দিলে স্পষ্ট যে রাজ্য প্রশাসন রাজীবকে আড়াল করতে চাইছে। অসহযোগিতা করছে তদন্তে।”
কিন্তু রাজ্য পুলিশের ওই শীর্ষ কর্তা কোথায়? রাজ্যের আইপিএস-দের একাংশের মতে তিনি কলকাতার বাইরে রয়েছেন। আবার অন্য একটি অংশের মতে তিনি শহরেই আছেন। সিবিআই অবশ্য সেই বিতর্কে যেতে রাজি নয়। তাঁদের বক্তব্য, আইনি পথেই এগোবেন তাঁরা। রাজ্য প্রশাসনের উত্তরের অপেক্ষা করবেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: হিউস্টনে মোদীর সভায় আসতে পারেন ট্রাম্প, আলোচনা হতে পারে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে