রাজীব কুমার।—ফাইল চিত্র।
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সচিব তথা কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে ফের জেরা করতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে আবেদন জানাল সিবিআই। সারদা মামলার তদন্তের সূত্রের এই আবেদন বলে সংস্থার দাবি। সিবিআইয়ের আবেদনের প্রতিলিপি ইতিমধ্যেই রাজীব কুমারের কাছে পৌঁছে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বড়দিনের ছুটির পর সুপ্রিম কোর্ট খুললেই এ সংক্রান্ত শুনানি হতে পারে বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি।
শুধুমাত্র হেফাজতে নিয়ে জেরা করাই নয়, সিবিআই রাজীবের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের অবমাননার আরও একটি মামলাও নতুন করে শুনানির আর্জি জানিয়েছে। সারদা-সহ অর্থলগ্নি সংস্থার মামলাগুলি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে চলছে। সেই মামলার তদন্তে সহযোগিতার পরিবর্তে রাজীব কুমার-মুরলীধর শর্মাসহ কয়েক জন আইপিএস বাধা সৃষ্টি করছে বলে সিবিআই বছর খানেক আগেই অভিযোগ করেছিল। রাজীবের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশির পরেই সেই অবমাননার মামলাটি দায়ের হয়েছিল। সেটি নতুন করে সামনে এনে শুনানি চেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার অবশ্য এখন আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন।
কেন এখন রাজীব কুমারকে ফের হেফাজতে চাইছে সিবিআই?
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, সারদার তদন্ত করতে গঠিত সিটের দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন রাজীব। সে সময় সারদার অফিস বা নানা ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়ে একটি ডায়েরি, ক্যাশ বুক উদ্ধার করেছিল সিট। তা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেননি রাজীব। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ওই ক্যাশবুক ও ডায়েরিতেই প্রভাবশালীদের কথা লেখা ছিল। সারদার অন্যতম পরিচালক দেবযানী মুখোপাধ্যায় ইডি ও সিবিআইয়ের কাছে জেরার সময় সমস্ত তথ্যাদি রাজীব কুমারকে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে সিবিআইয়ের দাবি। শিলংয়ের জেরা পর্বে দেবযানীর কণ্ঠস্বর শুনিয়ে রাজীবের কাছে জানতে চাওয়া হলেও তিনি স্বীকার করেননি। সারদার চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়ার আগে তাই রাজীব কুমারকে হেফাজতে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআইয়ের দাবি, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে রাজ্যের কোন কোন প্রভাবশালীর যোগাযোগ ছিল, তাঁরা কার ফোন ব্যবহার করে কথাবার্তা চালাতেন , সবই জানতেন সিটের ওই অন্যতম প্রধান সদস্য। সারদা তদন্তে গঠিত সিটের প্রধান ছিলেন তৎকালীন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি তিনি কেশব ভবনে গিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বলে খবর। যা অবশ্য তিনি পরে অস্বীকার করেন।
আইপিএস অফিসারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, সিবিআই রাজনৈতিক কারণে তাঁকে হেনস্থা করতে চাইছে। সারদা সংক্রান্ত সমস্ত নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কোনও ডায়েরি বা ক্যাশ বুক উদ্ধার হয়নি। তদন্তে সাহায্য করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ নিয়ে তৎপর হয়েছে। নড্ডা কাণ্ডে তিন আইপিএসকে দিল্লিতে বদলি করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যা নিয়ে বিরোধ চলছেই। এর পরেই রাজীবকে হেফাজতে নিতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের আবেদনে বেঙ্গল ক্যাডারের আইপিএস মহলে সাড়া পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।