গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় পুলিশকর্তা রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশের ঘাড়ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। সেই সিবিআই অফিসার তথাগত বর্ধনকে কলকাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরানো হয়েছে অবৈধ অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির নয়ছয়ের তদন্তে যুক্ত সিবিআই অফিসার ব্রতীন ঘোষাল এবং নারদ স্টিং অপারেশনের তদন্তে যুক্ত রঞ্জিত কুমারকে।
সারদা, রোজ ভ্যালি-সহ বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার তছরুপ নিয়ে তদন্ত শেষ হতে চলেছে বলে সিবিআইয়ের খবর। তদন্তের অন্তিম পর্বে হঠাৎ তিন সিবিআই অফিসারকে এ ভাবে বদলি করা হল কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। সংলগ্ন প্রশ্ন হিসেবেই বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চালিয়ে যাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল হয়ে উঠেছেন, তাঁদের সরিয়ে নতুন অফিসারদের আনা হল কেন? মাসখানেক আগেও লগ্নি-তদন্তে যুক্ত বেশ কয়েক জনকে কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরানো হয়েছিল।
‘‘সবই রুটিন বদলি। একই সঙ্গে তো দেশের ১৭০ জন অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। যে-সব অফিসারকে সরানো হয়েছে, তাঁরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এক জায়গায় ছিলেন। সিবিআইয়ে অফিসারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিভিন্ন স্থানে ও পৃথক পৃথক ব্রাঞ্চে কাজ করার রীতি আছে,’’ বলছেন সিবিআইয়ের এক কর্তা। তিনি জানান, লগ্নি সংস্থা ও নারদের তদন্ত প্রায় শেষ। এখন কিছু ‘অ্যাকশন’ নেওয়ার পালা। ফলে নতুন অফিসারদের নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্রয়োজনে তাঁদেরও অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন: বিজেপি ‘বিরোধিতা’র প্রশ্নে বাম-কংগ্রেসকে তোপ মমতার
তদন্তকারী সংস্থার একাংশের বক্তব্য, কেন পাঁচ বছরেও তদন্ত শেষ হল না, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সেটাই সব চেয়ে বড় অভিযোগ ও প্রশ্ন। দিল্লির সিবিআই-কর্তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন, তদন্তকারীদের কেউ কেউ অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নথিপত্রও বেরিয়ে যাচ্ছে। বাইরে চলে যাচ্ছে সিবিআইয়ের খবরাখবর, তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবং পরিকল্পনার কথাও। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা ও অভিযুক্তদের সঙ্গে অফিসারদের যোগাযোগের কারণেই এই রদবদল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অফিসারদের একাংশ।
আরও একটি ব্যাখ্যা, তদন্ত শেষে কিছু বড় পদক্ষেপ করা হতে পারে। যে-সব অফিসার এত দিন ধরে টানা জেরা ও জিজ্ঞাসা পর্ব চালিয়েছেন, তাঁদের নিরাপত্তার ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। এক অফিসার সরাসরি পদস্থ কর্তাদের জানিয়েছেন, তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। জনসমক্ষে তদন্তকারীদের হেনস্থার উদাহরণও রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে যাওয়া তথাগতকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল থানায়। সিবিআইয়ের ৪০ জনের দলকে সে-দিন থানায় আটকে রেখেছিল কলকাতা পুলিশ। এসপি পদমর্যাদার এক অফিসারকে হুমকিও দেওয়া হয়। ‘জাগো বাংলা’র তদন্তে যাওয়া এক সিবিআই অফিসারের গাড়ির বিরুদ্ধে লাগাতার ট্র্যাফিক আইন ভাঙার মামলাও করেছিল পুলিশ। রোজ ভ্যালির একটি হোটেলে আমানতকারীদের বিক্ষোভের জেরে সিবিআইয়ের এক তদন্তকারীকে হেনস্থা করা হয়েছিল।