রাজীব কুমারের খোঁজে বৃহস্পতিবার রুবি মোড়ের কাছে একটি হোটেলে হানা দিয়েছিলেন সিবিআইয়ের কর্তারা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসছেন তাঁরা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পার্ক স্ট্রিটে রাজীবের বাসভবনে গিয়ে নতুন করে নোটিস দিয়ে এল সিবিআই। অবিলম্বে সিবিআইয়ের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ রয়েছে সেই নোটিসে।
পাশাপাশি এ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজীবের খোঁজে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে বেশ কয়েক জন অফিসারকে ডেকে আনা হয়েছে কলকাতায়। কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী সিআরপি-কে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তাঁরা এ দিন ছুটে বেড়িয়েছেন শহরে।
এ দিন রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে রাজীবের ‘অ্যাকটিভ’ ফোন নম্বর জানতে চাওয়া হয়েছে বলেও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজীব প্রধানত যে দু’টি ফোন নম্বর ব্যবহার করেন, তা গত বেশ কয়েক দিন ধরে হয় ‘নট রিচেবল’, নয়তো ‘সুইচড অফ’। ফলে, ফোন মারফত রাজীবের অবস্থান এখনও জানতে পারেনি সিবিআই। তাদের দাবি, রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান ছুটিতে গেলে কোনও না কোনও ‘অ্যাকটিভ’ ফোন নম্বর থাকবে, যে নম্বরে রাজ্যের প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজীব সরকারি ভাবে যে ছুটির দরখাস্ত করেছেন, সেখানে একটি ঠিকানা এবং একটি ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। মাঝে সিবিআইয়ের চিঠি পেয়ে রাজ্য সরকারের তরফে রাজীবের দেওয়া ঠিকানা এবং ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য এখন কী করতে পারে? সূত্রের ব্যাখ্যা, অতীতে এমন কোনও ঘটনা কখনও ঘটেনি। ফলে এটা কোন ধরনের ‘গাফিলতি’ বা ‘অপরাধ’ হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের বিবেচনাই শেষ কথা। কী করা হবে, সেটা প্রশাসনই ঠিক করবে বলে সূত্রের দাবি।
সরকার কী করতে পারে?
• রাজ্য সরকার কৈফিয়ৎ তলব করতে পারে।
• কারণ দর্শানোর (শো-কজ) নির্দেশ দিতে পারে প্রশাসন।
• উত্তর সন্তোষজনক না-হলে পদক্ষেপ করতে পারে সরকার।
• প্রশাসনিক ব্যাখ্যায়, কর্তব্যে গাফিলতি, ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ না-মানা, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ইত্যাদি অপরাধে সাধারণ ভাবে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন কোনও সরকারি কর্মী বা আধিকারিক।
এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ সিবিআইয়ের চার জন অফিসারের একটি দল ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবনে যায়। তাঁর দোতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁর খোঁজখবর নেয়। সিবিআইয়ের দলটি পার্ক স্ট্রিটের ওই ঠিকানায় গাড়িতে চেপে সরাসরি ঢুকে যায়। সিবিআইয়ের অফিসারেরা রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন জানতে পেরে কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েক জন অফিসার ও কর্মী উর্দি পরে এবং সাদা পোশাকে সেখানে হাজির হন ও নিরাপত্তা বাড়ান। মিনিট চল্লিশ পার্ক স্ট্রিটের ওই ঠিকানায় থাকার পরে সিবিআইয়ের দলটি যখন গাড়িতে চেপে বেরোতে যায়, তখন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা কর্ডন করে তাঁদের বার করে দেন। এর পরে মহাকরণের পিছনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যায় সিবিআই দলটি। সেখানকার অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে। দলটি ওই ব্যাঙ্কে মিনিট চল্লিশ ছিল বলে সূত্রের খবর।
রাজীবের বাসভবনে নোটিস দিয়ে দুপুরে সিবিআইয়ের একটি দল পৌঁছয় আলিপুরের আইপিএস মেসে। সেখানে যে কর্মীরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় সিবিআই অফিসারদের। এই আইপিএস মেস মূলত উচ্চপদস্থ অফিসারদের ক্লাব। সেখানে বেশ কিছু ঘর রয়েছে। ভিন রাজ্যের আইপিএস অফিসারেরা কোনও কাজে কলকাতায় এলে সেখানে থাকেন। কোনও একটি সূত্র সিবিআইকে এ দিন সকালে জানায়, রাজীব আইপিএস মেসে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারেন। যদিও সেখানে প্রতিটি ঘরে সিবিআইকে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি।
রুবি মোড়ের কাছে টাটা গোষ্ঠীর হোটেলে সিবিআইয়ের একটি দল পৌঁছলে সেখানেও বিস্তর নাটক হয়। প্রথমে রিসেপশনে গিয়ে কথা বলেন অফিসারেরা। পরে হোটেলের আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁদের কথা বলতে দেখা যায়। হোটেলে পিছনে রান্নাঘরের দিক দিয়ে সিবিআই অফিসারদের কয়েক জনকে ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়। সিবিআই দলটি অনেকক্ষণ হোটেলের ভিতরে ছিলেন। হোটেলের কর্মী-আধিকারিকেরা অবশ্য এই হানা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
ওই হোটেল থেকে বেরিয়ে সিবিআইয়ের দলটি বিমানবন্দরে যায়। যাওয়ার পথে নিউটাউনে রাস্তার পাশে একটি পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়ে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় অফিসারদের। সেখান থেকে বিমানবন্দরে গেলেও কোনও অফিসারই গাড়ি থেকে নামেননি। বিমানবন্দরের ভিতরে না ঢুকে যশোহর রোডে আড়াই নম্বর গেটের কাছে গিয়ে উল্টোমুখে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার তাঁরা ফিরে গিয়েছেন সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে।