সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ‘প্রভাবশালী-যোগ’ দেখে তদন্তকারীরা ‘তাজ্জব’ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে উঠে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালে নানা ধরনের দুর্নীতিতে এই ‘প্রভাবশালী’দের সঙ্গে সন্দীপের সমীকরণের চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসছে বলেও তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। সন্দীপের মোবাইল ফোন এই যোগসূত্র প্রমাণের অন্যতম হাতিয়ার বলেও ওই সূত্রের দাবি।
সন্দীপের ফোনটি এখন ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সন্দীপ, তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, চিকিৎসক মহল এবং নানা ক্ষেত্রের প্রভাবশালী মহলের মধ্যে দুর্নীতির যোগসূত্র যাচাই করতে প্রাক্তন অধ্যক্ষের ফোনের ‘কল ডিটেলস’ গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।
তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, "সন্দীপের দু’টি মোবাইল ফোন ও দু’টি ল্যাপটপ, আর জি করের অফিসে তাঁর কম্পিউটারের ডেস্কটপ এবং নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাতেই প্রভাবশালী যোগের তথ্য সূত্র উঠে আসছে।” ওই অফিসারের মতে, “এটা ত্রিস্তরীয় দুর্নীতি। পর্দার আড়ালে আছে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক মহলের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী এবং তাঁদের মধ্যস্থতাকারীরা। প্রভাবশালীদের সুতোর টান অনুযায়ী সন্দীপের মাধ্যমে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এবং দুর্নীতির কালো টাকা নানা ভাবে ভাগ হয়েছে।” সে ক্ষেত্রে সন্দীপ-সহ তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, চিকিৎসকেরা লাভবান হয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। এবং সন্দীপ নিজে এই চক্রে যথেষ্ট সক্রিয় বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।
আর জি করের দুর্নীতির মামলায় সিবিআইয়ের আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখা প্রথমে সন্দীপকে গ্রেফতার করে। সন্দীপ ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী এবং দেহরক্ষীকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন, ধর্ষণের তদন্তেও তাঁকে হেফাজতে নেয় সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ শাখা। টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও হেফাজতে নেয় সিবিআই। স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ সন্দীপকে প্রায় ২০০ ঘণ্টার কাছাকাছি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখার তদন্তকারীরাও সন্দীপ, দুই ব্যবসায়ী এবং দেহরক্ষীকে আট দিন হেফাজতে রেখে জেরা করেছেন।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, দুর্নীতির নানা শাখা-প্রশাখায় সন্দীপের সাবলীল চলাচল চোখ কপালে তোলার মতো। তদন্তকারীদের অভিযোগ, আর জি কর-সহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ও চিকিৎসার সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি এবং মর্গে অজ্ঞাতপরিচয় দেহের অঙ্গের বিক্রির বেআইনি কারবারে সন্দীপ পুরোভাগে, হাসপাতালে বদলি ও পদোন্নতির মাধ্যমে আর্থিক দুর্নীতিতেও প্রাক্তন অধ্যক্ষ যেন মধ্যমণি। তদন্তকারীদের সূত্রে আরও দাবি, সন্দীপের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক এবং আর জি করের হাসপাতালের আধিকারিকদের একাংশ দু’টি মামলার তদন্তেই আতশকাচের নীচে।