তদন্তে সিবিআই। —নিজস্ব চিত্র।
নতুন গ্রেফতারি শূন্য। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ আর কিছু তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ। গত আট দিনে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইতদন্তের অগ্রগতি কার্যত এমনই বলে সূত্রের খবর।
বিভিন্ন সূত্রে আভাস মিলেছে, এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। এই নিয়ে বিচার চেয়ে নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিলও হচ্ছে। তবে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় ছাড়া এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি সিবিআই। এই আবহেই, আজ, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে এই তদন্ত সম্পর্কে রিপোর্ট জমা দিতে চলেছে সিবিআই।
তদন্তে কী উঠে এল, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে কিছু না জানালেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, তদন্তের কিনারা নিয়ে তারা আশাবাদী। এখনও পর্যন্ত এই অপরাধের ঘটনায় নানা অভিমুখের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে বলেও সিবিআই সূত্রের দাবি। যা যাচাই করে আদালতগ্রাহ্য প্রমাণে পরিণত করার পথে হাঁটছে সিবিআই। এর মধ্যেই তদন্তকারী অফিসারেরা ঘটনা পরম্পরার সঙ্গে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মিলছে কি না, সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন।
সূত্রের খবর, সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্তের রিপোর্টের মধ্যে যথেষ্ট ধোঁয়াশা দেখছে সিবিআই। সেমিনার রুম থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হলেও তা নিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। কলকাতা পুলিশের তরফে একটি মাত্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং যে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এখনও পর্যন্ত সিবিআই-কে দেওয়া হয়েছে, তা-ও খুঁটিয়ে দেখছে তারা। ওই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এক জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মামলা সাজানো যায় কি না, সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে। নানা খটকা দূর করতে ওই হাসপাতালের ২০ জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলা চলছে। কিন্তু পুলিশ যে বয়ান নথিভুক্ত করেছে, তা ছাড়াও বহু তথ্য উঠে আসছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। এই তদন্ত নিয়ে জনমানসে প্রমাণ লোপাটের ধারণাটিও তদন্তকারীদের একাংশ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এক সিবিআই কর্তার দাবি, ‘‘এমনও বহু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যাতে, অন্য কোথাও ঘটনা ঘটিয়ে সেমিনার রুমে মৃতদেহ ফেলা হয়েছে— এমন ভাবার অবকাশ থাকে। সঞ্জয়ের আগে কেউ ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধে আংশিক ভাবে জড়িয়েছিলেন কি না, সেটাও দেখা দরকার।’’
কিন্তু সিবিআই তা হলে এখনও কাউকে গ্রেফতার করল না কেন? কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, তাড়াহুড়ো না করে আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ হাতে নিয়ে তারা এগোতে চায়। খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ঘটনাস্থল ও মৃতের দেহ থেকে নানা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার ফরেন্সিক রিপোর্ট দরকার। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। হাতে ওই রিপোর্ট থাকলে সন্দেহভাজন অন্য কাউকে গ্রেফতারির প্রমাণ মজবুত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন, রিপোর্ট হাতে আসা পর্যন্ত কি শুধু জিজ্ঞাসাবাদই চলবে? তদন্তকারীদের দাবি, তাড়াহুড়ো করলে হঠকারিতা হবে। সিবিআই-এর একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি রয়েছে। এখনও পর্যন্ত যত রকম সন্দেহ এবং ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, তা আদালতের রিপোর্টে জানানো হবে। কলকাতা পুলিশের সমস্ত তদন্ত রিপোর্টও উচ্চ আদালতে জমা দেওয়া হবে। অসঙ্গতির দিকগুলিও বলা হবে। তদন্তভার নিয়ে নিম্ন আদালতে কী কী আর্জি জানানো হয়েছে, তা-ও উচ্চ আদালতে জমা দেওয়া হবে।’’
এ দিনও আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে যান সন্দীপ। বৃহস্পতিবার তিনি ফের মুখোমুখি হবেন সিবিআইয়ের। সন্দীপের গাড়ির চালকের সঙ্গে আলাদা ঘরে কথা বলে ঘটনা জানাজানি হওয়ার দিন (৯ অগস্ট) এবং পরের ক’দিন তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, তাজানার চেষ্টা করে সিবিআই। রাত সওয়া ৯টা নাগাদ তিনি বেরিয়ে যান সিজিও কমপ্লেক্স থেকে। আর জি করের মেডিক্যাল সুপার বুলবুল মুখোপাধ্যায় এবং মৃতার চার সহপাঠীর সঙ্গেও কথা বলে সিবিআই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খবর দিতে গিয়েই ডাক্তার ছাত্রীর মা-বাবাকে মৃত্যুর খবর দিতে দেরি হয় বলে তদন্তে উঠে আসছে। সন্দীপের বয়ানের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও ডাকবে সিবিআই।