‘সৎ চন্দন’ই শুধু নয়, নিয়োগ দুর্নীতিতে একই দিনে পাঁচ এজেন্টকেও গ্রেফতার করল সিবিআই। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে বাগদার বাসিন্দা রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডলকে। শুধু চন্দনই নয়, তাঁর সঙ্গে গ্রেফতার করা করে হয়েছে দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত ৫ জনকে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ৫ জন এজেন্ট হিসাবে কাজ করত। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিত তাঁরা। সিবিআইয়ের অভিযোগ এসএসসি-র গ্রুপ সি, ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বহু অযোগ্যকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন অভিযুক্তরা।
শুক্রবার দুপুরে চন্দন-সহ এই ৬ জনকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁদের সোমবার পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তাঁদের জেরা করে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রভাবশালীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে পারেন তদন্তকারীরা। শুক্রবার বিকেলে সিবিআইয়ের তরফে ধৃত ৬ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুব্রত সামন্ত রায়, কৌশিক ঘোষ, শাহিদ ইমাম, শেখ আলি ইমাম, আব্দুল খালেক এবং চন্দন মণ্ডল। ধৃতদের মধ্যে কৌশিক বাদে প্রত্যেকেই এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন। কৌশিক ছিলেন সাব এজেন্ট। তদন্তকারীদের অনুমান এই এজেন্টদের প্রধান ছিলেন চন্দন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসও দাবি করেছিলেন, চন্দন ওরফে রঞ্জন বিপুল টাকা নিয়ে কলকাতায় প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
বছরখানেক আগে ‘সৎ রঞ্জন’ নামে একটি ভিডিয়ো ইউটিউবে প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন। ওই ভিডিয়োয় তিনি দাবি করেছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার জনৈক রঞ্জন টাকা নিয়ে বহু লোককে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। গোপনীয়তার স্বার্থে ওই সময় রঞ্জনের আসল নাম প্রকাশ্যে আনেননি উপেন। পরে অবশ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে তা স্বীকার করে নেন তিনি। এর পরেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে চন্দনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে নামে সিবিআই। হাই কোর্ট জানায়, প্রয়োজনে চন্দনকে নিজেদের হেফাজতেও নিতে পারেন তদন্তকারীরা। তার ভিত্তিতেই চন্দনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়। মামলাকারীকেও তদন্তকারীরা ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
টাকা নিয়ে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ‘কারিগর’ বাগদার চন্দনের বাড়িতে গত জুলাই মাসে হানা দিয়েছিল সিবিআই। উপেন-কথিত ‘রঞ্জন’ই যে আসলে চন্দন মণ্ডল, তা কলকাতা হাই কোর্টে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রকাশ্যে এসেছিল। তার পরেও কেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চন্দন ওরফে ‘রঞ্জন’-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। শুক্রবার সকালেই রঞ্জনকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন চন্দন। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উপেন তাঁর অভিযোগে জানিয়েছিলেন, টাকার বিনিময়ে বহু জনকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন রঞ্জন। তবে চাকরি পাইয়ে দিতে না পারলে তিনি নাকি সুদ-সহ অর্থ ফিরিয়ে দিতেন। সে কারণে উপেন এক জায়গায় চন্দনকে ‘সৎ রঞ্জন’ বলেও অভিহিত করেন। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা বাগদা থেকে কলকাতায় প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিতেন রঞ্জন— এমনই দাবি করেছিলেন উপেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের নেওয়া টাকা বিভিন্ন হাত ঘুরে কাদের কাছে পৌঁছত, রঞ্জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তা খতিয়ে দেখতে পারে সিবিআই।