এই চক্রে অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ফাইল ছবি
কয়লা পাচার মামলায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের আট পুলিশকর্তাকে দিল্লিতে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এ বার গরু পাচার মামলাতেও সিবিআইয়ের নজর পড়েছে বীরভূমের পুলিশকর্মীদের উপরে। এই চক্রে অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ আর এক পুলিশকর্মীর নাম জানা গিয়েছে। তিনি বীরভূম জেলা পুলিশের সদর দফতরে কর্মরত বলেও সিবিআই সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের অভিযোগ, গরু পাচারের লভ্যাংশ পাচারে পুলিশের একাংশের ভূমিকা রয়েছে বলেই সন্দেহ। সেই সূত্রে কয়েক জন পুলিশকর্মীকে তলব করা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।
সিবিআই সূত্রের দাবি, বীরভূম জেলা পুলিশের সদর দফতরে কর্মরত ওই পুলিশকর্মীর সঙ্গে অনুব্রতের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মূলত সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই পুলিশকর্মীদের একাংশ গরু পাচারে যুক্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেহগালের হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির ক্ষেত্রে তার প্রমাণ মিলেছে। সেহগাল এবং মাধব নামে আর এক পুলিশকর্মীর বয়ানও তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে। তবে মাধব গত ২৬ এপ্রিল ইলামবাজারে এক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। সূত্রের খবর, ওই বয়ানের ভিত্তিতে গরু পাচার নিয়ে অনুব্রতকেও জেরা করছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে চুপ থাকলেও বিভিন্ন তথ্যের সামনে অনুব্রতকে ‘অসহায়’ দেখাচ্ছে বলেই সূত্রের দাবি।
অনুব্রতের কাছ থেকে কার কাছে গরু পাচারের লভ্যাংশ পৌঁছত, সে ব্যাপারে তথ্য জোগাড় করছে সিবিআই। তৃতীয় ওই পুলিশকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ ব্যাপারে আরও তথ্য মিলতে পারে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। কারণ, তাঁর মাধ্যমেও লভ্যাংশ পাচার হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, ওই পুলিশকর্মী সম্পর্কে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, তিনি গত ৮ বছরে বীরভূমের বাইরে বদলি হননি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খয়রাশোল, নলহাটি, দুবরাজপুর, ইলামবাজার, মহম্মদবাজার থানায় ‘পোস্টিং’ পেয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, ওই এলাকাগুলির সঙ্গে গরু এবং বালি-পাথর পাচারের যোগসূ্ত্র রয়েছে।
একটি সূত্র এ-ও দাবি করেছে যে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাসে দু’বার ছ’টি করে বাক্সে টাকা পাচার হত। ২০১৮ সাল থেকে প্রতি মাসে দু’বার আটটি করে বাক্স এসেছে। খতিয়ে দেখছে সিবিআই। সূত্রের এ-ও দাবি, শুধু নিচুতলার পুলিশকর্মীই নন, পুলিশের উপরমহলের অনেকেও গরু পাচারের ব্যাপারে জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, গরু পাচারে অনুব্রত বা ওই পুলিশকর্মীরা অংশ মাত্র। এ ক্ষেত্রে একটি বৃহত্তর চক্র জড়িত। কোটি কোটি টাকার লেনদেনের সঙ্গে অনেক ‘অদৃশ্য হাত’ জড়িত। সেই হাতের সন্ধানেই অনুব্রত এবং ওই পুলিশকর্মীদের বয়ান তদন্তকারীদের হাতিয়ার হতে পারে।