শুভ্রা কুন্ডু ও মনোজ কুমার। ডান দিকে, দিল্লির হোটেল থেকে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজে দু’জন এক সঙ্গে ফাইল চিত্র।
তাঁর সঙ্গে রোজ় ভ্যালি কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, শুভ্রা কুন্ডুর ‘ঘনিষ্ঠতার’ অভিযোগ উঠেছিল বহু আগেই। সেই অভিযোগ মাথায় নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) থেকে সরতে হয়েছিল মনোজ কুমারকে। তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল তাঁর মূল সংস্থা শুল্ক দফতরে।
এ বার সেই মনোজের নামে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাল সিবিআই। গত ৯ জুন ওড়িশা হাই কোর্টের বিচারপতির কাছে হলফনামা জমা দিয়ে শুভ্রার সঙ্গে তাঁর সেই ‘ঘনিষ্ঠতার’ অভিযোগ এনেছেন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ় ভ্যালির সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সোজ়েন শেরপা।
কেন এই অভিযোগ?
শুভ্রা রোজ় ভ্যালির কর্নধার গৌতম কুন্ডুর স্ত্রী। ২০১৫ সালে ইডি তাঁকে গ্রেফতার করে। সংস্থার টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে সম্প্রতি শুভ্রাকেও গ্রেফতার করে সিবিআই। তিনি এখন ভুবনেশ্বরে জেলে রয়েছেন। সম্প্রতি জেলেই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ওড়িশা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন। ওই আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআই যে ১৪ পাতার হলফনামা জমা দিয়েছে, সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে মনোজের নাম।
গত পাঁচ বছরে শুভ্রাকে একাধিকবার তলব করলেও তাঁর বিরুদ্ধে সহযোগিতা না করার অভিযোগ এনেছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, গৌতম জেলে থাকাকালীনও শুভ্রা আমানতকারীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কলকাতা ও মুম্বইতে দু’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। গত পাঁচ বছরের তিনি একাধিকবার বিদেশে গিয়েছেন। সিবিআইয়ের অভিযোগ, তদন্ত চলাকালীন তদন্তকারী সংস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন শুভ্রা। আর সেই প্রসঙ্গেই মনোজের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কয়েক বছর আগে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে মনোজকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশও। হেফাজতে নিয়ে মনোজকে জেরা করা হয়েছিল। বর্তমানে সেই মামলায় জামিনে রয়েছে মনোজ। জামিন পাওয়ার পরেই তাঁকে শুল্ক দফতরে বদলি করা হয়েছিল।
সিবিআই সূত্রের খবর, গৌতমের কাছ থেকে ইডি যে দু’টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছিল, তার কোনও হদিশ নেই। ওই ফোন দুটি মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি বলেও দাবি সিবিআইয়ের। অভিযোগ, যে সময়ে গৌতমকে গ্রেফতার করে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল সেই সময়ে মনোজই ছিল মামলার তদন্তকারী অফিসার। তদন্তকারীদের দাবি, মনোজকে ডেকে ওই ফোনের বিষয়ে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও লাভ হয়নি।
সিবিআইয়ের এই লিখিত অভিযোগ জমা পড়ায় অস্বস্তিতে ইডি কর্তারা। শুধু রোজ় ভ্যালি নয়, সারদা কাণ্ডেও মনোজ তদন্তকারী অফিসার ছিলেন। ওই মামলাতেও কিছু ক্ষেত্রে মনোজের ভূমিকায় ধোঁয়াশা রয়েছে বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। মনোজের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁর দাবি, তিনি শুভ্রাকে ইনফর্মার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। রোজ় ভ্যালির অনেক সম্পত্তিও তিনি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন।
আজ, সোমবার রোজ় ভ্যালি কাণ্ডে কলকাতার বিচার ভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে মামলার অন্যতম তদন্তকারী অফিসার হিসেবে মনোজকে তলব করা হয়েছে। সে দিন তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বলে আদালত সূত্রের খবর।