CBI

চিটফান্ড কাণ্ডে নতুন করে জাল বিছাচ্ছে সিবিআই, অস্বস্তি বাড়তে পারে শাসকদলের অন্দরে

সারদা-রোজভ্যালি তদন্তের শেষ পর্যায়ে নতুন করে ফের তদন্তের জাল বিস্তার করতে হল কেন তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর না দিলেও তদন্তকারীদের ইঙ্গিত নতুন করে পাওয়া বেশ কিছু তথ্যই তাঁদের বাধ্য করেছে তদন্তের পরিধি বিস্তৃত করতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩২
Share:

চিটফান্ড তদন্তে সাঁড়াশি আক্রমণে নামতে চলেছে সিবিআই।—ফাইল চিত্র।

এক দিকে জাল গোটানো, অন্য দিকে নতুন করে জাল ছড়িয়ে সারদা-রোজভ্যালি সহ এ রাজ্যের চিটফান্ড তদন্তে সাঁড়াশি আক্রমণে নামতে চলেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, চিটফান্ড তদন্তের শেষ পর্যায়ে নতুন করে এই জাল বিস্তার হলে লাফিয়ে অস্বস্তি বাড়বে শাসকদলের ঠিক কেন্দ্রস্থলে।

Advertisement

সারদা-রোজভ্যালি তদন্তের শেষ পর্যায়ে নতুন করে ফের তদন্তের জাল বিস্তার করতে হল কেন তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর না দিলেও তদন্তকারীদের ইঙ্গিত নতুন করে পাওয়া বেশ কিছু তথ্যই তাঁদের বাধ্য করেছে তদন্তের পরিধি বিস্তৃত করতে। কী সেই তথ্য তা নিয়ে মুখে কুলুপ তদন্তকারীদের। তবে তাঁরা মনে করছেন এক সময়ে শাসকদলের অতি ঘনিষ্ঠ তিন ব্যক্তির বয়ানই বদলে দিয়েছে শেষ পর্যায়ে এসে যাওয়া তদন্তের মোড়। সারদা-রোজভ্যালি সহ চিটফান্ড তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিবিআইয়ের ইও৪ শাখার এক শীর্ষ তদন্তকারী আধিকারিক স্বীকার করেন এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের একটি অবশ্যই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল রায়ের। তার ইঙ্গিত তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করতে সাহায্য করেছে এক সময়ে শাসক দলের নেত্রীর ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তবে এই দু’জন বাদ দিলেও তদন্তকারীদের হাতে যে তুরুপের তাস ‘সুপার কপ’ রাজীব কুমারের কিছু বয়ান, অস্বীকার করতে পারেননি সিবিআইয়ের ওই শীর্ষ আধিকারিক।

এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বুধবার বলেন, “চিটফান্ড তদন্তের একটা বড় অংশই আমরা গুটিয়ে এনেছি। যে তদন্তের মূল লক্ষ্য ছিল বাজার থেকে কারা লগ্নিকারীদের প্রতারণা করে টাকা তুলেছে, সেই টাকা কী ভাবে ব্যবহার হয়েছে, সেই টাকাতে কারা লাভবান হয়েছে তা চিহ্নিত করা। অথচ তদন্তের প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে সরাসরি লাভবানদের বাইরেও ঘুরপথে লাভবান হয়েছেন এমন কিছু ব্যক্তি যাঁরা আগাগোড়া চিটফান্ড থেকে নিজেদের সরাসরি সংশ্রব এড়িয়ে চলেছে। অথচ তাঁদেরই মদতে বাজার থেকে টাকা উঠেছে। অর্থাত্ তাঁরাও এই মামলায় সমান ভাবে অভিযুক্ত।”

Advertisement

আরও পড়ুন: নারদ-কাণ্ডে তৎপর সিবিআই, তলব শোভন-অপরূপাকে

ঘুরপথে ব্যাপক ভাবে লাভবান হওয়া এই ব্যক্তিরা কারা তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ সিবিআই কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘তদন্তের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখুন তা হলেই বুঝতে পারবেন।’ সেই প্রসঙ্গেই এক তদন্তকারী বলেন, “আমরা সম্প্রতি শাসকদলের তিন শীর্ষ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী এবং ডেরেক ও’ব্রায়েনকে জেরা করেছি। মূল উদ্দেশ্য ছিল শাসকদলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র তহবিলের উত্স সম্পর্কে জানতে চাওয়া। সেখান থেকেও এমন বেশ কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে যা এই তদন্তের পরিধি বিস্তারে বাধ্য করেছে। ঠিক একই ভাবে তদন্তের পরিধিতে অনেকটাই জায়গা জুড়ে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি বিক্রি করে পাওয়া অর্থেও। এ প্রসঙ্গেই সিবিআইয়ের এক শীর্ষ আধিকারিক ইঙ্গিত দেন, সুপ্রিম কোর্টে গ্রেফতারি বাঁচানোর রক্ষাকবচ হারানোর পর তাঁদের হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল রাজীব কুমারকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার। ঠিক যে ভাব‌ে সুপ্রিম কোর্টে পি চিদম্বরমের শুনানি হওয়ার আগেই গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরেও হেফাজতে নেওয়া হয়নি মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এই শীর্ষ আইপিএসকে, বলেই দাবি তাঁর।

আরও পড়ুন: নারদ-কাণ্ডে এ বার রাজ্যের আরও দুই মন্ত্রীকে ডেকে পাঠাল সিবিআই

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, সম্প্রতি রোজভ্যালি মামলায় তলব করা হলে সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন রাজীব কুমার। ওই সিবিআই আধিকারিকের দাবি, শিলংয়ে দেখা রাজীব কুমার আর ওই দিন সিবিআই দফতরের রাজীব কুমারের মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তিনি অনেকটাই নিজের পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তদনন্তকারীদের সঙ্গে। আর এখান থেকেই সিবিআইয়ের ভাঁড়ারে জমা পড়েছে নতুন রসদ। তদন্তকারীদের একাংশ বলেন, “নারদ তদন্তের দ্রুত নিষ্পত্তি করে সারদা তদন্তে মনোনিবেশ করতে চাইছে সংস্থার সদর দফতর।” তিনি ইঙ্গিত দেন, শোভন চট্টোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দারের পর এ বারে নারদ তদন্তে ডাকা হবে শাসকদলের দুই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বয়ান রেকর্ড করে দ্রুত এই মামলায় চার্জশীট দেওয়ার দিকে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আর তার মাঝেই সলতে পাকানো হচ্ছে সারদা-রোজভ্যালি-সহ চিটফান্ড মামলার চূড়ান্ত পর্যায়ের তদন্তের জাল বিছোতে। যার ফোকাস অবশ্যই এ রাজ্যের এমন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি যাঁরা চিটফান্ড প্রতারণায় নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছেন। এক শীর্ষ সিবিআই আধিকারিক বলেন, “এই তদন্তের স্বার্থেই এ দিন নয়াদিল্লির সিবিআইয়ের সদর দফতরে ডাকা হয়েছিল রাজ্য বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে।’’ মুকুলবাবুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বীকার করেন যে এ দিন সিবিআইয়ের সদর দফতরে গিয়েছিলেন। তবে কী কারণে গিয়েছিলেন তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি এই বিজেপি নেতা। তবে এ দিন মুকুল রায়ের সিবিআই দফতরে যাওয়া যে যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement