CBI Raid

তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচির মধ্যেই সিবিআই হানা দিল ন’জন নেতামন্ত্রীর বাড়িতে, ববি ক্রুদ্ধ, মদন মেজাজেই

পুর-নিয়োগ মামলায় গত সপ্তাহেই রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। এ বার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং মদন মিত্রের বাড়িতে হানা দিল সিবিআই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৪
Share:

(বাঁ দিকে) মদন মিত্র এবং ফিরহাদ হাকিম। —নিজস্ব চিত্র।

কোথাও দশ ঘণ্টা, কোথাও সাড়ে আট, আবার কোথাও পাঁচ-ছ’ঘণ্টা! পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যের ন’জন নেতা-মন্ত্রীর ঠিকানা মিলিয়ে মোট ১২টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাল সিবিআই। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (ববি) চেতলার বাড়ি। রয়েছে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের দু’টি ঠিকানা। এ ছাড়াও যাঁদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চলেছে, তাঁদের কেউ পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান, কেউ আবার প্রাক্তন পুরপ্রধান।

Advertisement

পুর-নিয়োগ মামলায় গত সপ্তাহেই রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। এ বার সিবিআই হানা দিল পুরমন্ত্রী ফিরহাদের বাড়িতে। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সংস্থার তল্লাশি অভিযান শেষ হওয়ার পরেই বাইরে বেরিয়ে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ববি। সুর সপ্তমে চড়িয়ে মন্ত্রী বললেন, ‘‘আমি কি চোর?’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিজেপির কাছে মাথা নত করব না বলেই কি এ ভাবে আমার সম্মানহানি করা হচ্ছে?’’ সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযান নিয়ে ববিকে ঠিক যতটা ক্রুদ্ধ দেখিয়েছে, ঠিক ততটাই খোশমেজাজে ছিলেন মদন। দুপুরেই তাঁর দু’টি ঠিকানায় তল্লাশি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এর পর বাইরে বেরিয়ে সেই পরিচিত মেজাজেই দেখা গেল বিধায়ককে। মুখে টেনশনের লেশমাত্র নেই। ব্র্যাকব্রাশ করা চুল, চোখে কালো রোদচশমা, কালো টিশার্ট-ট্রাউজ়ার্সে শোভিত মদন খানিক চটুল হাসি দিয়েই জানান, তাঁকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছে সিবিআই। তাঁর দাবি, পুর-নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে এসে গোয়েন্দারা নাকি তাঁর জীবনসঙ্গিনীর কথাও জানতে চেয়েছেন! এর পরেই মদন বলেন, ‘‘আমি মদন মিত্র। বুকের পাটা ফুলিয়ে বলছি, ছেলেমেয়েদের চাকরির জন্য শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব। কিন্তু তাতে যদি কেউ এক ইঞ্চি দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে, ধরতে হবে না। আমি নিজে গলায় দড়ি দিয়ে গঙ্গায় লাফ দেব।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ‘বকেয়া’ আদায়ে রাজভবনের সামনে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না কর্মসূচির মধ্যে এই সিবিআই অভিযানে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে শাসকদল তৃণমূল। তৃণমূলের মুখপাত্র তথা দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না হিট। বিজেপির উপর চাপ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে আসতে হয়েছে, তাতেও ফল শূন্য। রাজ্যপাল কোণঠাসা, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই নজর ঘোরাতে রাজনৈতিক পরিকল্পনায় আবার নামানো হল এজেন্সিকে। এ ভাবে তৃণমূলকে দমানো যাবে না।’’ পাল্টা বিজেপির দাবি, কেন্দ্রীয় সংস্থা তাদের কাজ করছে। এখানে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘সিবিআই কার বাড়িতে কেন গিয়েছে আমরা জানি না। সিবিআইয়ের বিষয়। কী তথ্য পেয়েছে সেটা আমরা জানি না। তবে বড়মাপের দুর্নীতি যে হয়েছে, সেটা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। বাংলার মানুষ বুঝে গিয়েছে, দুর্নীতি চাপা দেওয়ার জন্যই রাজভবনে নাটক চলছে।’’

Advertisement

রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ফিরহাদের চেতলার বাড়িতে যায় সিবিআই। তল্লাশি চলে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। গোয়েন্দারা বাড়িতে ঢোকার পরেই চারপাশ ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানেরা। কাউকেই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, ফিরহাদের নিরাপত্তারক্ষী ভিতরে ঢুকতে চাইলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁর আইনজীবী গোপাল হালদারকেও। আইনজীবী জানান, তাঁর প্রবেশাধিকার রয়েছে। কিন্তু তাঁকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা। পরে গোপালকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আপাতত বাড়িতে ঢুকতে পারবেন না তিনি। ফিরহাদের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিমকেও প্রথমে ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। দরজায় সামনে দীর্ঘ ক্ষণ সিআরপিএফ জওয়ানদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও চলে প্রিয়দর্শিনীর। পরে অবশ্য তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়। বা়ড়িতে সিবিআই তল্লাশি চলাকালীনই সমাজমাধ্যমে সরব হন ফিরহাদ কন্যা। প্রিয়দর্শিনী লেখেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে যে আমাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, সেই আলোচনার কী হবে? আমাদের সামাজিক সম্মানেরই বা কী হবে? আমাদের সামাজিক সম্মান ও আদর্শ নিয়ে আপস করতে হচ্ছে, তার কী হবে? আমাদের পরিবারকে হেনস্থা করা হল। যখন তার কোনও প্রমাণ মিলবে না, তার দায়ই বা কে নেবে?’’ সিবিআই তল্লাশির পর ফিরহাদও বললেন, ‘‘কেন এই ভাবে আমাকে আর আমার পরিবারকে হেনস্থা করা হবে? সমাজসেবা করেছি। এটাই কি আমার অপরাধ? তা না হলে এ ভাবে হেনস্থা করা হবে কেন? আমার ভাইয়ের আজ শ্রাদ্ধ ছিল। সেখানেও যেতে দেওয়া হল না আমাকে। বলুন তো, পুর-নিয়োগের কোনও ফাইল কি পুরমন্ত্রীর কাছে আসে।’’

রবিবার সকালে মদনের ভবানীপুরের বাড়িতে যায় সিবিআইয়ের একটি দল। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদনের দক্ষিণেশ্বরের একটি আবাসনেও তল্লাশি চালানো হয়। মদনের বাড়ির সামনেও মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানদের। রবিবার দুপুরে ওই দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চলে। মদনের দাবি, ঠিক কোন পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, সেটাই ঠিক ভাবে বলেননি সিবিআই আধিকারিকরা। তিনি জিজ্ঞাসা করায় এক আধিকারিক নাকি বলেছেন, ‘‘ওই যে মিউনিসিপ্যাল নিয়ে সব হচ্ছে না? ওই জন্য এসেছি।’’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের কথা বলতেই কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি বলেন, অয়ন শীলের সঙ্গে মতি শীলের যোগাযোগ ছিল, যিনি রামকৃষ্ণের বন্ধু ছিলেন। তা হলে মতি শীলের বাড়িতেও রেইড হোক।’’

মদনের দক্ষিণেশ্বরের ঠিকানা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার আরও সাত জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। তার মধ্যে রয়েছে কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, ব্যারাকপুর, দমদম, উত্তর দমদম, টাকি, কামারহাটি। এগুলির মধ্যে কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, উত্তর দমদম, নিউ ব্যারাকপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধানদের বাড়িতে হানা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা। তল্লাশি অভিযান চলেছে হালিশহরের অংশুমান রায়, কাঁচরাপাড়ার সুদমা রায়, উত্তর দমদমের সুবোধ চক্রবর্তী এবং নিউ ব্যারাকপুরের তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতে। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হালিশহরের পুরপ্রধান ছিলেন তৃণমূল নেতা অংশুমান। দুই পুরপ্রধানের পরিবার সূত্রেই খবর, তাঁদের বাড়ির আলমারি ঘেঁটে কাগজপত্র বার করে দেখেছেন তাঁরা। তৃপ্তির পরিবার সূত্রে দাবি, বাড়ি থেকে বেরোনোয় প্রাক্তন পুরপ্রধানের গাড়ির নম্বরটি নেন সিবিআই কর্তারা। সিবিআইয়ের সাত সদস্যের একটি দল গিয়েছিল টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সিবিআই সূত্রে খবর, সোমনাথের বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দমদম পুরসভার পুরপ্রধান হরেন্দ্র সিংহের বাড়িতেও চলে কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযান।

নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীম সাহার বাড়িতেও হানা দিয়েছে সিবিআই। অসীম বর্তমান পুরবোর্ডের সদস্য। সেই সঙ্গে তৃণমূলের নদিয়া উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদকও। সিবিআই সূত্রে খবর, নিয়োগ মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ এবং অয়ন শীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অসীমের নাম পাওয়া গিয়েছে। রবিবার সকালে কৃষ্ণনগর থানা এলাকায় অসীমের শক্তিনগরের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। তার পর সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। কেন্দ্রীয় সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, ধৃত অয়নের সংস্থাকে পুরসভার কর্মী নিয়োগ পরীক্ষার বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে অসীমের কী ভূমিকা ছিল, সেই ব্যাপারেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়।

নিয়োগ মামলায় ধৃত হুগলি তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই অয়নের কথা জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। পরে অয়নও গ্রেফতার হন। সিবিআই সূত্রে খবর, অয়নের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে পুর-নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছিল। পাওয়া গিয়েছিল অনেক ওএমআর শিট। তার ভিত্তিতে সম্প্রতি বিভিন্ন পুরসভায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের দাবি, পুরসভাগুলিতে অনেক পদেই টাকা দিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে। তার একটি ‘রেট চার্ট’ (অর্থাৎ, কত টাকা কী চাকরি) প্রকাশ্যে আনা হয়। তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভায় শ্রমিক এবং গাড়িচালক, ঝাড়ুদার এবং গ্রুপ ডি-র চাকরিতে সর্বনিম্ন চার লক্ষ টাকা করে, গ্রুপ সি, টাইপিস্ট এবং সহকারীর চাকরিতে সর্বনিম্ন সাত লক্ষ টাকা করে জমা দিতে হত। তবেই মিলত চাকরি। আর চাকরি বিক্রিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শাসকদল অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সরকারি বা বেসরকারি কোনও ক্ষেত্রেই এই ধরনের ‘রেট চার্ট’ থাকা সম্ভব নয়। আর যদি থাকেও, কেউ নিশ্চয়ই নিজের বাড়ি বা অফিসে তা সাজিয়ে রাখবেন না।

ক্ষুব্ধ ফিরহাদ

সিবিআই বেরিয়ে যাওয়ার ১৫ মিনিট পরেই স্ত্রী রুবি হাকিম এবং কন্যা প্রিয়দর্শিনীকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘এত বছর ধরে এই চেতলার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে আসছেন। এঁরা আমাকে কাউন্সিলর বানিয়েছেন। পরে মানুষ আমাকে বিধায়ক করেছেন। আজ পর্যন্ত এঁরা কেউ বলতে পারবেন না আমি কোনও দুর্নীতি করেছি। যদি কিছু করে থাকি, তবে মানুষের সেবা করেছি। তার পরেও আমাকে এ ভাবে হেনস্থা করা হবে? কেন? আমি কি চোর? সুজন বাবু, বিকাশ বাবু, দিলীপ ঘোষ বলুন তো, আমি চোর?’’ এর পরেই সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন, ‘‘একটা অসভ্য, বর্বর দল। এদের কাছে মাথা নত করব না বলে এ ভাবে আমার পরিবারকে অপমান করা হচ্ছে। বিজেপিকে বলব, আমাকে জেলে রাখুন, কিন্তু এ ভাবে অপমান করবেন না।’’ নিজের রাজনৈতিক জীবনের প্রসঙ্গ টেনে ফিরহাদ বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট আমলেও মার খেয়েছি। মামলা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। কিন্তু এ ভাবে হেনস্থা করা হয়নি। আমি জেলে গিয়েছি। হাসপাতালে গিয়ে শুয়ে থাকিনি। ২৫ বছরের কাউন্সিলর থেকেছি আমি। দুর্নীতির সঙ্গে কখনও হাত মেলাইনি। কেউ যদি বলে আমাকে টাকা দিয়েছে, তবে সব ছেড়ে ইস্তফা দেব।’’ ফিরহাদ বলেন, একটি মামলাতেই আমি অভিযুক্ত। কিন্তু সেই মামলার বিচার হবে না। রাজীব গান্ধী যেমন মৃত্যুর পর ক্লিনচিট পেয়েছিলেন, ওই মামলাতেও তাই হবে। আমি মারা যাওয়ার পর হয়তো ক্লিনচিট পাব।’’ নারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথাও টেনেন আনেন ফিরহাদ। প্রশ্ন করেন, ‘‘ওই একই মামলায় শুভেন্দুও তো অভিযুক্ত। কই ওকে তো ডাকা হল না?’’ ফিরহাদের প্রশ্ন, ‘‘ওরা আমাকে বলে যাচ্ছে পুরসভা রিলেটেড কেস। কিসের রিলেটেড কেস? পুরসভার ফাইলের সঙ্গে পুরমন্ত্রীর যোগ থাকে। আর অয়ন শীলই বা কে? তাকে চিনিই না। বিচারপতি অমৃতা সিংহ কি এর পর জিজ্ঞাসা করবেন, রিলেটেড কী পাওয়া গিয়েছে এই তল্লাশি চালিয়ে?’’

‘মানসিক নির্যাতন’, অভিযোগ প্রিয়দর্শিনীর

তল্লাশি চলাকালীন সমাজমাধ্যমে সরব হন প্রিয়দর্শিনী। তিনি লেখেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি, এখনও পুনরায় বলব। আমরা কোনও রকম তল্লাশি বা অভিযানে ভীত নই। আমাদের লুকোনোর কিছুই নেই। কিন্তু আমাদের যে সামাজিক হেনস্থা হল, তার কী হবে?’’ পুরমন্ত্রী ফিরহাদের জ্যেষ্ঠা কন্যা গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন। বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়ে আসা প্রিয়দর্শিনীকে বহু দিন ধরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সামাজিক অনুষ্ঠানেও দেখা গিয়েছে। তৃণমূলশ্রুতি, প্রিয়দর্শিনীই ফিরহাদের রাজনৈতিক উত্তরসূরি! বাবাকে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রায় ১০ ঘণ্টা তল্লাশির পর কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়ি থেকে বেরলো সিবিআই। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ফিরহাদের চেতলার বাড়িতে ঢুকেছিলেন সিবিআই কর্তারা। ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁরা দু’টি গাড়িতে বেরিয়ে যান এলাকা ছেড়ে। বাইরে এসে সিবিআই কর্তারা অবশ্য ১০ ঘণ্টার তল্লাশি নিয়ে কিছু বলেননি। তবে সিবিআই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ফিরহাদের কন্যা প্রিয়দর্শিনী। লোহার গেটের ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে তিনি বলেন , ‘‘মানসিক নির্যাতন হয়েছে।’’

যা বললেন মদন

মদনের দাবি, এর পর তাঁকে সরকারি ভাবে অন রেকর্ড সিবিআই প্রশ্ন করে, তাঁর কত জন স্ত্রী। তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘আমাকে বলল, আপনার একটা বৌ না দুটো বৌ? আমি বললাম, সেটা তো খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে। তবে এটা জানি, আমি হাঁটলেই ৫০ জন গোপিনী হাঁটবে। কিন্তু আমার নামে কোনও ৪৯৮ ধারায় মামলা নেই। আমার সব ভার্চুয়াল।’’ মদন জানান, তিনিও সিবিআইকে প্রশ্ন করেছেন যে, তাঁর অভিনীত ‘ও লাভলি’ সিনেমা তাঁরা দেখেছেন কি না। কিন্তু নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে মদনের বক্তব্য কী? তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘আমাদের অফিসে ভিক্ষা করতে এলে এক কেজি চাল, একটু ডাল, মিষ্টি দিই। বাচ্চা এলে তাকে চকোলেট দিই। তাই টেট হোক, গ্রুপ ডি হোক, আমাদের অফিসে যদি কেউ চাকরির খোঁজে আসে, তাঁকে তো ডান্ডা মেরে তাড়াতে পারি না। ফলে অনেকেই এসেছেন। হাজার হাজার আবেদন করেছেন মানে হাজার হাজার চাকরি হয়েছে, এমন তো নয়।’’ তিনি জানান, পুরসভার নিয়োগে তাঁর কোনও হাত নেই। কারণ, যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন তিনি জেলে ছিলেন। মদন যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘‘ধরে নিন, আমাদের অফিসে এক হাজার জনের অ্যাডমিট পাওয়া গেল। তাদের এক জন হয়তো চাকরি পেল। তা হলে কি কোনও ভাবে ধরে নেওয়া যায় যে তাঁর চাকরি টাকা দিয়েই হয়েছে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement