(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের থেকে ‘বকেয়া’ আদায় নিয়ে সোমবারই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রবিবার রাতে রাজ্যপাল বোস রাজভবনে ফেরার পর এমনই খবর মিলল শাসকদল তৃণমূল সূত্রে।
রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে রাজভবনের সামনে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন অভিষেক। রাজভবনের উত্তর ফটকের অনতিদূরে মঞ্চ বেঁধে ধর্না কর্মসূচি চলছে তাঁর। যা চতুর্থ দিন পড়েছে রবিবার। এই দিনেই রাজভবনে ফিরলেন রাজ্যপাল বোস। তৃণমূল সূত্রে খবর, এর পরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন দলীয় নেতৃত্ব। এর পরেই রাজ্যপাল এবং অভিষেকের মধ্যে বৈঠকের দিনক্ষণ স্থির হয়।
রবিবার রাতে দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরলেও রাজভবনের বাইরে রাজ্যপালের সাক্ষাৎ চেয়ে ধর্নায় বসা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেননি তিনি। বরং সাক্ষাৎ নিয়ে পাল্টা প্রশ্নে চাপ তৈরি করে বলেছেন, আগে আইনশৃঙ্খলা ঠিক হোক তার পর সাক্ষাৎ করা যাবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন রবিবার দুপুরেই তুলেছিল রাজভবন। নবান্নকে পাঠানো ওই চিঠিতে মূলত তিনটি প্রশ্ন করা হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে। রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিনটি প্রশ্ন হল— এক, ১৪৪ ধারা কার্যকর রয়েছে এমন এলাকায় মঞ্চ বেঁধে ধর্নার অনুমতি কি আদৌ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ? দুই, যদি দেওয়া হয়ে থাকে, তবে কে দিলেন এবং কোন আইন বলে? তিন, যদি অনুমতি ছাড়াই ধর্নামঞ্চ বাঁধা হয়ে থাকে এবং তিন দিন ধরে বিক্ষোভ জমায়েত চলতে থাকে তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এই সব প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব জবাব দিতেও বলেছিল রাজভবন।
এর পাল্টা জবাব অবশ্য অভিষেকও তাঁর ধর্না মঞ্চ থেকে দিয়েছিলেন। অভিষেক প্রশ্ন করেন, ‘‘রাজ্যপাল বলছেন, ১৪৪ ধারা রয়েছে যেখানে, সেখানে কী ভাবে ধর্না করে? কিন্তু বিজেপি সাত বার মিছিলের ক্ষেত্রে কেন এমন বলেননি?’’ গত দু’বছরের উদাহরণ দিয়ে রাজভবনের ওই তিন প্রশ্নের পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাত বার ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে কর্মসূচি করেছে বিজেপি। একাধিক বার বিজেপি বিধায়কেরা মিছিল করে রাজভবনে গিয়েছেন। রাজভবনের বাইরে ভিড় করে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। তখন রাজ্যপালের দায়িত্ব কোথায় ছিল?’’ রাজভবনের প্রশ্নকে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, ‘‘দলে দলে বিজেপি বিধায়কেরা পায়ে হেঁটে রাজভবনে এসেছিলেন। তখন রাজ্যপাল পুলিশকে চিঠি দেননি। অথচ কর্মসূচির সময় আলাদা অবস্থান। রাজ্যপালকে মনে রাখতে হবে তিনি বাংলার রাজ্যপাল। তাঁর বিজেপির প্রতি দায়বদ্ধ না থেকে বাংলার প্রতি দায়বদ্ধ হওয়া উচিত।’’
রাত ৮টার কিছু আগে এই মন্তব্য করেন অভিষেক। তার পর তাঁর ধর্না কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কেরা চলে যান। অভিষেক থেকে যান রাজভবনের উত্তরে ফটকের কাছে বাঁধা ধর্না মঞ্চে। এর কিছু ক্ষণ পরেই রাজ্যপাল রাজভবনে প্রবেশ করেন দক্ষিণের ফটক দিয়ে।