গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান রাজীব কুমারকে সিবিআই সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবে বলে জানিয়ে দিলেন আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার সুব্রতবাবুর এজলাসে রাজীবের নামে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানায় সিবিআই। এ প্রসঙ্গে তারা গত ৩ ফেব্রুয়ারির হেনস্থার প্রসঙ্গ তোলে। রাতে সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করে আদালত জানায়, এ বার ফের তেমন কিছু হলে আদালতের দরজা খোলা আছে।
বৃহস্পতিবার রাজীবের বিরুদ্ধে শুনানির সময় তাঁর সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিমের তুলনা টানেন সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র। তাঁর যুক্তি, যে ভাবে দাউদ ইব্রাহিম নিজের প্রভাব খাটিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, তেমনই রাজীবও প্রভাব খাটিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দাউদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে পরিস্থিতিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল, রাজীবের ক্ষেত্রেও তেমনটাই করার কথা বিবেচনা করা হোক। যদিও রায়দানের সময় বিচারক জানান, দাউদের বিরুদ্ধে ‘টাডা’-য় মামলা করা হয়েছিল। রাজীবের মামলার ক্ষেত্রে তাই ওই রকম কিছু প্রযোজ্য নয়। বিচারক সুপ্রিম কোর্টের দাউদ সংক্রান্ত নির্দেশ দেখতে চাইলে তার প্রতিলিপিও এ দিন আদালতে জমা দেয় সিবিআই।
রাজীব-ঘনিষ্ঠদের দাবি, রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে দাউদের তুলনা টেনে নিজেদের মরিয়া ভাবটাই এ দিন তুলে ধরেছে সিবিআই। সেটা এ দিন আরও স্পষ্ট হয়েছে, যখন রাজীবের খোঁজে কনভয় নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গা দাপিয়ে বেড়াল সিবিআই অফিসারদের একাধিক দল। কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থার দাবি, শহরেরই কোথাও ‘গা ঢাকা’ দিয়ে রয়েছেন রাজীব। প্রথমে তাঁর বাসভবন ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিট, পরে আলিপুরে আইপিএস অফিসারদের মেস এবং পরে রুবি মোড়ের কাছে একটি হোটেলে তল্লাশি চালায় সিবিআই।
এ দিন দুপুরে আলিপুরে সারদা মামলার কেস রেকর্ড এসে পৌঁছনোর পরে সেখানে শুরু হয় আইনি লড়াই। সেখানে সিবিআইয়ের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্ট রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার পরেই বেপাত্তা রাজীব।তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক। বিচারক পাল্টা জানতে চান, ‘‘রক্ষাকবচ উঠে গেলে তো আপনারা গ্রেফতার করতে পারেন। কেন করছেন না?’’ সিবিআইয়ের যুক্তি, ৩ ফেব্রুয়ারি রাজীবের বাড়িতে গিয়ে হেনস্থা হতে হয়েছে অফিসারদের। এ বার আদালতের নির্দেশ নিয়ে এগোতে চান তাঁরা।
এর আগে মঙ্গলবার বারাসতের বিশেষ আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানার আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। সে দিন রাজীবের পক্ষ থেকেও আগাম জামিনের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু, সেই আদালত কোনও আবেদনই শোনেনি। সারদার কেস রেকর্ড পাঠিয়ে দেওয়া হয় আলিপুরে। এ দিন নথি পৌঁছতেই সিবিআই আবার আবেদন করে। কিন্তু, রাজীবের পক্ষ থেকে আগাম জামিনের আবেদন জানানো হয়নি। কেন? রাজীবের পক্ষে দুই আইনজীবী গোপাল হালদার ও পার্থ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজীবকে সাক্ষী হিসেবে ডাকা হচ্ছে। তিনি অভিযুক্ত নন। তাই আগাম জামিনের আবেদন আপাতত জানানো হচ্ছে না। তা হলে কেন সিবিআইকে জানিয়ে গত মঙ্গলবার বারাসত আদালতে তিনি আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন? এই প্রশ্ন করা হলেও রাজীবের আইনজীবীরা তার উত্তর দেননি।