ম্যাথু স্যামুয়েল
নারদ স্টিং-কাণ্ডে শাসক দলের মন্ত্রী-নেতাদের বাড়ি ও অফিসে টাকা দেওয়ার দিন ক্ষণের সঙ্গে ম্যাথু স্যামুয়েলের মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ মিলিয়ে দেখছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। ম্যাথু সত্যিই ওই সব দিনে মন্ত্রী-নেতাদের বাড়ি গিয়েছিলেন কি না, কা খতিয়ে দেখতেই সেই পরীক্ষা। এখনও পর্যন্ত তা মিলে গিয়েছে বলেই সিবিআই সূত্রের দাবি।
বৃহস্পতিবার দিল্লির লোদী রোডে সিবিআইয়ের সদর দফতরে ম্যাথুকে পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। কোথায়, কবে তিনি কোন নেতার কাছে গিয়েছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য ম্যাথু সিবিআইকে দেন। ওই নথি অনুযায়ী ম্যাথুর ফোনের টাওয়ার লোকেশন মিলিয়ে দেখা হয়। ম্যাথুর দাবি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে স্টিং অপারেশন চলাকালীন তহলকা-র মালিক কে ডি সিংহের সঙ্গে প্রতিদিন তাঁর কথা হতো। সে ক্ষেত্রেও মোবাইলের কল রেকর্ড পরীক্ষা করে ম্যাথুর দাবির সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআই অফিসারদের যুক্তি, অভিযুক্ত নেতারা টাকা নিয়েছিলেন— সেটা প্রমাণ হলেই হবে না। সেই টাকার বিনিময়ে তাঁরা কাজ করে দিলে বা তার প্রতিশ্রুতি দিলেই তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা সম্ভব। ম্যাথু সন্তোষ শঙ্করণ ছদ্মনামে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শিল্পপতিদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি নিজের পরিচয় দেন। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা ভোটের আগে কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নিয়েছিলেন, তা দেখা হচ্ছে। ম্যাথুর দেওয়া এডিটেড ও কাঁচা ফুটেজের বাইরেও কোনও কথা হয়েছিল কি না, তা দেখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সেরা শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার দেগঙ্গার দস্যিদের
তথ্যপ্রমাণ জোরদার করার জন্য শাসক দলের কোন নেতা অফিসে না বাড়িতে, বাড়িতে হলে শোওয়ার ঘরে না বসার ঘরে টাকা নিয়েছেন, তা খুঁটিয়ে জেনেছে সিবিআই। সেই অনুযায়ী ওই সব নেতার বাড়িতে বা অফিসে গিয়ে ভিডিও-র সঙ্গে সেই ছবি মেলানোরও পরিকল্পনা রয়েছে সিবিআইয়ের। যাতে আদালতে ভিডিও-র সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।
দেখা গিয়েছে, এক সাংসদ সন্তোষের সঙ্গে যৌথ ভাবে ফুডপার্কের ব্যবসা করবেন বলে জানান। ম্যাথুর অন্য সমস্যা হলে তিনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। দক্ষিণ শহরতলির এক প্রভাবশালী মন্ত্রী কলকাতা শহরে যে কোন ধরণের ব্যবসায়িক সাহায্য করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কাঁচা ফুটেজ ও ম্যাথুর বয়ান অনুযায়ী ১৪ জন নেতা-মন্ত্রী ও সাংসদ প্রতিশ্রুতি দিয়েই ঘুষ হিসেবে টাকা নিয়েছিলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোটের পর সন্তোষ ওরফে ম্যাথুকে দেখা করার জন্য অনুরোধও করেছেন। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায, ‘‘এক ছাত্র নেতা তো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও ম্যাথুকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে ভোটের পর সন্তোষকে দেখা করার অনুরোধ করেছেন।’’ সিবিআই কর্তাদের কথায়, সাংবাদিক নয়, ব্যবসায়ী পরিচয়ে শাসক দলের নেতাদের টাকা দেন ম্যাথু। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ আদালতগ্রাহ্য কি না, তা ঠিক করতে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা তা আরও কাঁটাছেড়া করছেন।