ফাইল চিত্র।
একই দিনে কলকাতা থেকে আসানসোলে নিয়ে গিয়ে আবার সেখান থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে হল তাঁকে। গরু ও কয়লা পাচারের মামলায় অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্র গ্রেফতার হওয়ার পরে অসুস্থ হিসেবে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে ছিলেন। শুক্রবার সেই জোড়া মামলায় দু’রকম নির্দেশের জেরে দিনভর চলল দৌড়ঝাঁপ।
বিকাশকে এ দিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আসানসোলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হলে কয়লা পাচারের মামলায় তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আবার গরু পাচার কাণ্ডে তাঁকে ১০ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠান ওই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। এই নির্দেশ পেয়ে তাঁকে ফের কলকাতার নিজ়াম প্যালেসে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৮ এপ্রিল বিকাশকে আবার আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বিকাশ কয়লা ও গরু পাচারে অন্যতম মূল অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রের ভাই। বিনয় ভারত ছেড়ে ভানাটু নামে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছেন। বিকাশকে এ দিন সশরীরে আদালতে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। বিকাশের জামিনের আর্জি জানিয়ে তাঁর আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ সওয়াল করেন, কয়লা পাচারের মামলায় তাঁর মক্কেল প্রায় ১২০ দিন সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার জানান, বিকাশ হেফাজতের বাইরে থাকলে এই মামলা প্রভাবিত হতে পারে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক কয়লা পাচার কাণ্ডে বিকাশকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
অন্য দিকে, গরু পাচার মামলায় বিকাশকে গ্রেফতার করার জন্য সিবিআইয়ের তরফে মাসখানেক আগে বিশেষ সিবিআই আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আর্জির প্রেক্ষিতে বিচারক এ দিন দু’পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে বিকাশকে গ্রেফতারের আবেদন মঞ্জুর করেন। তার পরেই বিকাশকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় সিবিআই। রাকেশ কুমার আদালতে জানান, গরু পাচার কাণ্ডে বিকাশ যে জড়িত, তার প্রমাণ আছে। তাই তাঁকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন। সোমনাথবাবু আদালতে জানান, গরু পাচারের মামলায় সিবিআইয়ের তরফে এখনও পর্যন্ত আদালতে তিনটি চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। তার কোনওটিতেই বিকাশের নাম নেই। সোমনাথবাবু বলেন, “কয়লা চুরি মামলায় বিকাশের জামিন হয়ে যাবে বুঝতে পেরে তাঁকে গরু পাচারের মামলায় জড়িয়ে নিজেদের হেফাজতে রাখতে চাইছে সিবিআই।” দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিকাশকে সিবিআই হেফাজতে পাঠান বিচারক।
গত ৭ ডিসেম্বর বিকাশকে ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। কিন্তু ‘অসুস্থ’ বলে জানানোয় তাঁকে ভর্তি করানো হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিকাশকে আসানসোলের এসিজেএম আদালতে তোলে সিবিআই। বিচারক তাঁকে ১৩ ডিসেম্বর আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। তাঁকে পাঠানো হয় আসানসোল জেলে। ১২ ডিসেম্বর অসুস্থ অবস্থায় বিকাশকে আবার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। সিবিআইয়ের দাবি, বিকাশ তাদের হেফাজতে থাকলেও এখনও তাঁকে সে-ভাবে জেরা করা যায়নি।
সপ্তাহখানেক আগে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান বিকাশ। তার পর থেকে তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্সি জেলে। কয়লা পাচার কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও (ইডি) বিকাশকে গ্রেফতার করেছিল। সেই মামলায় জামিনে আছেন তিনি।