ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি মামলায় ২৬৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে চাকরি বাতিলের নির্দেশকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে সওয়াল করলেন চাকরি খোয়ানো এক দল শিক্ষকের আইনজীবী এক্রামুল বারি।
একইসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধেও এ দিন কোর্টে সওয়াল করেছেন মানিকবাবুর কৌঁসুলি। শুধু তাই নয়, কোর্টে বিচারপতি যে মন্তব্য করেছেন তাও তৃণমূল বিধায়ক মানিকবাবুর সম্মানের পক্ষে যথোচিত নয় বলে তাঁর কৌঁসুলি অভিযোগ করেছেন।
এ দিন কোর্টে তিনি জানিয়েছেন, ওই শিক্ষকদের কোনও বক্তব্য পেশের সুযোগ না-দিয়েই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা ন্যায্য বিচারের পরিপন্থী। তা ছাড়া, মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনে কোথাও তদন্ত বা সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা ছিল না। চাকরি খোয়ানো শিক্ষকেরা চাকরিতে স্থায়ী হয়েছিলেন। কোনও স্থায়ী সরকারি কর্মীর চাকরি এ ভাবে বাতিল করা যায় না। বাতিলের ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি রয়েছে। সেই পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। উপরন্তু এই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ নির্দেশের ফলে স্থায়ী চাকরি হারিয়ে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা সঙ্কটে পড়েছেন বলেও এক্রামুল বারি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী শুনানিতে তাঁকে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বলেছে কোর্ট।
মানিকবাবুর কৌঁসুলির দাবি, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ ভাবে অপসারণের নির্দেশ দিতে পারেন না। ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কি বিচারপতি অপসারণের নির্দেশ দিতে পারেন না? মানিকবাবুর কৌঁসুলির জবাব, এ ক্ষেত্রে সভাপতির নিয়োগে অস্বচ্ছতা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। এমনকি, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদ সভাপতি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির হিসাব পেশ করতে বলেছেন। তার বিরুদ্ধেও যুক্তি পেশ করেন কৌঁসুলি।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে সভাপতিকে অপসারণ, সম্পত্তির হিসাব দাখিল করা এবং বেআইনি ভাবে নিয়োগের অভিযোগে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। ওই ২৬৯ জনকে একটি ভুল প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দিয়ে পাশ করানো হয়েছিল। এই সব নির্দেশের বিরুদ্ধেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরি খোয়ানো শিক্ষকদের কয়েকজন ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রসঙ্গত, ওই ২৬৯ জনকে ১ নম্বর পাইয়ে দেওয়া নিয়েই নানা প্রশ্ন রয়েছে। উঠেছে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগও। যদিও ওই শিক্ষকদের আইনজীবী এক্রামুল বারির বক্তব্য, ওই ২৬৯ জন আবেদন করেছিলেন এবং সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে একটি ভুল প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দিয়ে তাঁদের টেট পাশ করিয়ে চাকরি দেয়। কোনও প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীকে এই সুবিধা দেওয়া হয়নি।
যদিও টেট-এ ৬টি ভুল প্রশ্ন নিয়ে হাই কোর্টে আরেকটি মামলা রয়েছে। তার মধ্যেই কেন ২৬৯ জনকে তড়িঘড়ি একটি প্রশ্নের জন্য এক নম্বর দেওয়া হল সেই প্রশ্নও উঠেছে। এ দিন চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, আগামিকাল, বৃহস্পতিবার ফের মামলার শুনানি হবে। বাদী পক্ষের বক্তব্যের পরে তাঁরাও পাল্টা সওয়ালে নিজেদের বক্তব্য পেশ করবেন।
এ দিকে প্রাথমিক টেট নিয়ে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করেছেন বিজেপি নেতা তাপস ঘোষ। তাঁর আর্জি, প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে সিবিআই এবং ইডিকেতদন্তভার দেওয়া হোক। রাজ্যের তরফে এ দিন সেই মামলা খারিজের আর্জি জানানো হয়। সেই আর্জি এ দিন মঞ্জুর করেনি কোর্ট। রাজ্যকে নিজের বক্তব্য পেশের জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।