ভোট দিতে গিয়ে আপনি দেখলেন, বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র অথবা ব্যালট পেপারের প্রার্থী-তালিকায় একই নাম ও পদবির দু’জন হাজির। তাঁদের মধ্যে এক জন কোনও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে আপনি শুনেছেন। তাঁকেই পছন্দের ভোটটি দেবেন বলে মনস্থও করেছেন। কিন্তু ব্যালট পেপারে একই নামের প্রার্থী যে দু’জন! আপনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন তা হলে আপনার পছন্দের প্রার্থী কোন জন?
মুশকিল আসানে এ বার এগিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন। তারা ঠিক করেছে, এই সব ক্ষেত্রে নাম ও প্রতীকের পাশে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ছবিও দেওয়া হবে। এতে ভোটারদের বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকবেই না।
অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের বিভ্রম তৈরির মূলে থাকে রাজনীতির কারসাজি। সেই জন্যই প্রার্থীর ছবি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে জানাচ্ছে কমিশন। সরকারি ভাবে তাদের ব্যাখ্যা, অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলি একই নামের প্রার্থীকে পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এতে অনেক সময় ভোটারদের মনে প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই জট কাটানোর আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একই নামের ‘ডামি’ প্রার্থী দাঁড় করানোর চল বহু দিনের। এর হাত থেকে ভোটারকে রক্ষা করতে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র, ব্যালট পেপারে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ছবি থাকবে।
আগামী মে মাসের পর থেকে লোকসভা, কোনও রাজ্যের বিধানসভা বা বিধান পরিষদের যে-কোনও ভোটে নতুন এই নির্দেশ কার্যকর হবে বলে দিল্লির নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী করতে চাইছে কমিশন? তাদের বক্তব্য, ওই সব নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীকেই মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ছবি জমা দিতে হবে। যে-সব কেন্দ্রে একই নামের দু’জন প্রার্থী থাকবেন, সেখানে ওই ছবি ব্যবহার করা হবে। অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অবশ্য থাকবে শুধু নাম ও প্রতীক।
কমিশন অবশ্য এটাও জানিয়ে দিয়েছে যে, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তাদের কথায়, কোনও প্রার্থী ছবি না-ও দিতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের পাশে কোনও ছবি থাকবে না। আবশ্যিক যদি না-ই হবে, তা হলে সব প্রার্থীকেই ছবি জমা দিতে হবে কেন?
কমিশনের ব্যাখ্যা, কোনও কেন্দ্রে একই নামের একাধিক প্রার্থী আছেন কি না, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার আগে জানা যায় না। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সব প্রার্থীকেই ছবি দিতে বলা হবে। কোনও কেন্দ্রে একই নামের দুই বা তার বেশি প্রার্থী থাকলে পোস্টাল ব্যালট, সার্ভিস ব্যালটেও তাঁদের ছবি দিয়ে দেওয়া হবে। ছবি থাকবে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের মাঝখানে।
পুরনো ছবি হলে চলবে না। কমিশনের নির্দেশ, মনোনয়নপত্রের সঙ্গের ছবিটি যেন তা জমা দেওয়ার তারিখের আগের তিন মাসের মধ্যে তোলা হয়। ছবি জমা দেওয়ার জন্য কমিশন একটি নির্দিষ্ট ফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। সেই ফর্মে প্রার্থীকে জানাতে হবে, ছবিটি তিন মাসের মধ্যে তোলা। কোনও বিশেষ ইউনিফর্ম পরে ছবি তোলা যাবে না। এমনকী ছবিতে যেন প্রার্থীর মাথায় কোনও টুপি না-থাকে। ছবির উল্টো পিঠে প্রার্থী নিজে বা তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট সই করবেন। এ-সবই আসলে বিভ্রান্তি থেকে ভোটারদের রক্ষা করার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের এক কর্তা।