Madhyamik Examination 2024

‘দেরির ভয়ে পথে কেঁদেই ফেলেছে মেয়ে’

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর সময় এগিয়ে হয়েছে সকাল ৯.৪৫। তার উপর সন্দেশখালি থানার শুকদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলের ৮৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ঢেকনামারি দামোদর আদিবাসী বিদ্যালয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সুন্দরবন  শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো নিয়ে আশঙ্কা ছিলই। মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষার দিন দেখা গেল, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার একাংশের পরীক্ষার্থীরা সকাল ৬টায় বেরিয়েও পৌঁছল প্রায় সাড়ে ৯টায়।

Advertisement

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর সময় এগিয়ে হয়েছে সকাল ৯.৪৫। তার উপর সন্দেশখালি থানার শুকদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলের ৮৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ঢেকনামারি দামোদর আদিবাসী বিদ্যালয়ে। ফলে, অ্যাডমিট কার্ড হাতে পাওয়ার পর থেকেই চিন্তায় ছিল তারা। বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থী ঝুঁকি না নিয়ে পরীক্ষা শুরুর আগের দিন থেকেই কেন্দ্রের আশপাশে ঘর ভাড়া নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে যাদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই, তারা বাড়ি থেকেই যাতায়াত করছে।

প্রশাসনের আশ্বাস থাকলেও প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি ওই পড়ুয়াদের। সুখদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলের ছাত্রী জয়িতা গায়েন, ছাত্র পীযূষ সরকারেরা বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দেয়। টোটো স্ট্যান্ডে দাঁড়াতে হয় ১০-১৫ মিনিট। আজিজের খেয়াঘাটেও কিছু ক্ষণের অপেক্ষা। ধামাখালি অটোস্ট্যান্ড পৌঁছতে প্রায় ৮টা বেজে যায়। এ দিকে প্রথম দিন অন্তত সাড়ে ৮টার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের।

Advertisement

সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকেরা। শোভা গায়েন নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘তখন বেশি টাকা দিয়ে অটোস্ট্যান্ড থেকে একটি অটো রিজ়ার্ভ করে নিই। তাতেও পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে বাজে ৯.২০। আমার মেয়ে ততক্ষণে কেঁদে ফেলেছে।’’ শোভা আরও জানান, তাঁদের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। কিন্তু প্রথম দিনের অভিজ্ঞতায় তাঁরা বুঝেছেন বাড়ি থেকে যাতায়াত করা খুব সমস্যার। তাই ইংরেজি পরীক্ষার দিন থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে দু’জন পরীক্ষার্থী মিলে একটি ঘর ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

পরীক্ষার্থী মল্লিকা ঘোষ, পাওলি মণ্ডলেরা জানায়, তারা বাড়ি থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় বেরিয়ে টোটো রিজ়ার্ভ করে আজিজের খেয়াঘাটে আসে। নদী পেরিয়ে ফের ধামাখালি থেকে অটো রিজ়ার্ভ করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায়। ফলে ৮.৩০টা নাগাদই পৌঁছতে পারে। পাওলি বলে, ‘‘ভোর সাড়ে ৫টায় বেরোনোর জন্য ৪টে নাগাদ উঠে তৈরি হয়েছি। অত ভোরে কিছু না খেয়েই বেরিয়েছি। রোজ এ ভাবে যাওয়া খুবই সমস্যার।’’

সুখদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিষেক দাস বলেন, ‘‘আমাদের পড়ুয়াদের বলেছি পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার সামর্থ্য না থাকলে জানাতে। আমরা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।’’

ঢেকনামারি দামোদর আদিবাসী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুকুন্দমোহন সরকার বলেন, ‘‘প্রথম দিন সুখদুয়ানি রিফিউজি হাই স্কুলের সব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। কয়েক জন একটু দেরিতে পৌঁছলেও পরীক্ষা শুরুর আগে সকলেই এসে গিয়েছিল। এই স্কুলের অনেকে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। অনেকে আবার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রেও থাকছে।’’

সন্দেশখালি থানার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের তরফ থেকে অটো, টোটো, ইঞ্জিনভ্যান ও নৌকা চালকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের অপেক্ষা করানো যাবে না। তবে পরীক্ষার্থীদেরও বলব, যাদের অনেকটা দূরে সিট পড়েছে, হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে।’’

আর এক প্রত্যন্ত এলাকা পাথরপ্রতিমার ক্ষেত্রে অবশ্য নৌকায় খেয়া পারাপার করতে সমস্যা হয়নি। পড়ুয়াদের দাবি, পর্যাপ্ত নৌকা ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement