জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
রেশন দুর্নীতির দায়ে ইডির হেফাজতে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ১০ বছরের মেয়াদকালেই রেশন-দুর্নীতির সূত্রপাত বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার। তবে, বন দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে, গত আড়াই বছরে সেখানেও দুর্নীতির ছায়া পড়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে ইডি সূত্রের খবর।
জ্যোতিপ্রিয়র মন্ত্রিত্বকালীন সময়ে বন-আইনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করার প্রশ্নে ইতিমধ্যেই ওই বিভাগের বিরুদ্ধে বিরোধীদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে রাজ্যের বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণ সংগঠন। তাদের মিলিত স্বর বলছে— বেআইনি ভাবে গাছ কাটা, বনভূমি দখল করে রিসর্ট গড়া এবং অভয়ারণ্যের গা ঘেঁষে (বাফার এলাকায়) বিলাসবহুল আবাসন তৈরির ক্ষেত্রে চোখ বুজে থেকেছে বন বিভাগ। বিরোধীদের দাবি, মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের প্রচ্ছন্ন চাপের ফলে আপত্তি সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই বনকর্তারা নিয়মবিরুদ্ধ কাজে বাধা দিতে পারেননি।
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের অন্তত তিনটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের দাবি, রাজ্যের অন্তত পাঁচটি জেলায় বনভূমি দখল করে গজিয়ে উঠেছে রিসর্ট, যেগুলির ক্ষেত্রে বন দফতর কার্যত ‘চোখ বুজে’ ছিল। উত্তরের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের তিনটি অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যানের গা ঘেঁষে রিসর্টের রমরমা নতুন নয়।
অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে উত্তরবঙ্গের লাটাগুড়ি, মালবাজার কিংবা চিলাপাতা-গরুমারা-জলদাপাড়া— তিন অভয়ারণ্যের কোল ঘেঁষে রিসর্ট গজিয়েছে। উত্তরবঙ্গের একটি বন্যপ্রাণ সংগঠনের কর্তার কথায়, ‘‘বাম আমলের শেষ দিকেই রিসর্ট ব্যবসার সূত্রপাত। তবে তা কখনওই বন আইন ভেঙে নয়। রাজ্যে পালাবদলের পরে শাসকদলের নেতাদের মদতে সে আইন খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে!’’
লাটাগুড়িতে নিম্ন টন্ডু জঙ্গল লাগোয়া একটি উপনগরী নির্মাণকারী সংস্থার দাবি, বন এবং পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র রয়েছে। ভূমি দফতরে ফি জমা দিয়ে জমির বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। বন বিভাগেরও দাবি, ওই জমি জঙ্গল এলাকা বলে নথিভুক্ত নয়। পরিবেশকর্মীদের দাবি, ‘আইন ভেঙে’ পরিবেশের ভারসাম্যের পক্ষে স্পর্শকাতর এলাকায় (ইকো সেনসিটিভ জ়োনে) নির্মাণ চলছে। নির্মাণকারী সংস্থার দাবি, নির্মাণ বৈধ।
পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত দু’বছরে ডুয়ার্সের বনাঞ্চলের কোল ঘেঁষে বন-আইন ভেঙে অন্তত ৩৯টি রিসর্ট গড়ে উঠেছে। সেখানে মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ কারও মদত ছিল কি না, তা কেন্দ্রীয় সংস্থা খতিয়ে দেখুক।’’ হুগলির একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থার অভিযোগ, কিছু দিন আগে, এক দুপুরে ৭৩টি আমগাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল, শাসকদল ঘনিষ্ঠ এক নির্মাণসংস্থার দিকে। বনমন্ত্রীকে চিঠি লিখেও সুরাহা হয়নি। রাজ্যের বন-উপদেষ্টামণ্ডলীর এক প্রাক্তন সদস্যের দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের ‘পাহাড়-হাসছে’, এই প্রচারকে মান্যতা দিতে গিয়ে বন এবং পরিবেশ আইনের নিয়মকে অবজ্ঞা করে ওই হোম-স্টে গড়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’’
অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পরে পাহাড়ে স্থানীয়দের ‘মন পেতে’ ঢালাও পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। ভূমিরাজস্ব দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পাট্টা দেওয়া হলেও জমির ‘চরিত্র নির্ধারণের’ কাজ অসম্পূর্ণই। সেখানকার পুরনো বাসিন্দাদের ওই জমি ব্যবহারের হক রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা বন-আইন মেনেই।’’