জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি মাকসুরার। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
জঙ্গি যোগ-সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছে ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’-সহ অন্তত আটটি সংগঠন। কেন্দ্রের দেওয়া নিষিদ্ধ তালিকায় নাম রয়েছে ‘ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার’ও। সেই সংগঠনেরই নেত্রী কলকাতার মেয়ে মাকসুরা খাতুন। সংগঠন তো নিষিদ্ধ! কী করবেন মাকসুরা? বুধবার সকালেই আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলেছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া নেত্রীর সঙ্গে।
কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের আরবি শাখার পড়ুয়া মাকসুরার পড়াশোনা ভবানীপুর বরকতিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায়। এ হেন মাকসুরা যে সংগঠনের সভানেত্রী, তাকেই বুধবার সকালে ‘নিষিদ্ধ’ করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। আনন্দবাজার অনলাইনের এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে মাকসুরা বলেন, ‘‘ক্ষমতায় যিনি আছেন, তিনি তো সব কিছুই করবেন। উপরওয়ালার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এক দিন সবকিছুই হবে।’’ মাকসুরা মনে করেন, যেটা ‘সত্য’ সেটা প্রকাশিত হবেই। ‘মিথ্যা’ মিথ্যাই থেকে যাবে।
ঘটনাচক্রে, ক্ষমতায় যিনি আছেন বলে যাঁর দিকে ইঙ্গিত করলেন মাকসুরা, সেই ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ নরেন্দ্র মোদীকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। যা এখনও জ্বলজ্বল করছে মাকসুরার ফেসবুকের দেওয়ালে। সেই চিঠিতে ছত্রে ছত্রে মোদীকে কটাক্ষ করেছেন অধুনা নিষিদ্ধ সংগঠনের নেত্রী। কোথাও তিনি লিখেছেন, ‘আপনাকে শুভেচ্ছা জানানোর মূল কারণ এটাই, আজকের এই দিনে আপনি পৃথিবীতে না এলে আমরা জানতেই পারতাম না, মন্ কি বাতের মাধ্যমে ভক্তদের মন কী ভাবে জয় করা সম্ভব।’ আবার কোথাও সরাসরি খোঁচা দিয়ে লিখেছেন, ‘আপনাকে এই কারণে আবারও শুভেচ্ছা, আপনি চা বিক্রি করা না জানলে দেশকে এই ভাবে এত সুন্দর পদ্ধতিতে বিক্রি করতে পারতেন না।’ মাকসুরা ‘দেশ বিক্রি করে আমাদের ঋণী বানানোর জন্য’ মোদীকে হাজার, হাজার, লক্ষ, লক্ষ ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শেষে লিখেছেন, ‘ভাল থাকুন, এ ভাবেই এত সুন্দর পদে বসে আমাদের ধ্বংস করুন।’
আবার অন্য একটি পোস্টে এই মাকসুরাই বলেছেন, ‘ইসলাম নারীদের পিছিয়ে রাখেনি বরং আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। বরং নারীদের পিছিয়ে রেখেছে বর্তমান সময়ের কিছু ফতোয়াধারী শায়েখ।’ আবার মাকসুরার সমাজমাধ্যমের পাতায় দেখা যাচ্ছে তিনি নারীদের প্রসাধন, সুগন্ধী, উঁচু হিলতোলা জুতো, অলঙ্কার, আঁটোসাঁটো পোশাক ত্যাগ করে হিজাব ও নিকাব পরার আবেদন করছেন।
মাকসুরার কলমে নারী ও ইসলাম।
মাকসুরার কাছে প্রশ্ন ছিল, কেন্দ্র তো জানাচ্ছে এই সংগঠনগুলোর সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ রয়েছে? আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নেত্রী মাকসুরার জবাব, ‘‘জঙ্গি সংগঠন কোনটা এবং কোনটা জঙ্গি সংগঠন নয়, সেটা যারা দেখছে তারা বুঝছে। যাদের ক্ষমতা আছে, তারা তো সত্যকে মিথ্যে বলতেই পারে। এখানে আমাদের কী বলার থাকে?’’ এর পরেই নিষিদ্ধ সংগঠনের নেত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘জঙ্গি সংগঠন হতে গেলে কী করতে হয়? কী কী বৈশিষ্ট্য থাকে? কী কী শেখানো হয়? জঙ্গিদের তো অস্ত্র-ধরা শেখানো হয়, বোমা বানানো শেখানো হয়। কিন্তু আপনি কি কোথাও দেখেছেন, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এ সব কিছু করেছে?’’ মাকসুরা বলে চলেন, ‘‘কোভিডের সময় যখন অ-মুসলিমরা কোভিড হয়ে যাওয়ার ভয়ে পরিবারের কেউ মারা গেলেও ছেড়ে চলে গিয়েছে, তখন পপুলার ফ্রন্ট সংগঠনের ভাইয়েরা দাহকাজ করেছে। অসমে বন্যার সময় দেখতে পাবেন, কত জায়গায় নৌকায় করে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। এত কিছু সামাজিক কাজকর্ম করার পরেও যদি একটা সংগঠনকে জঙ্গি বলা হয়, তাহলে আমরা আর কী বলতে পারি!’’
পপুলার ফ্রন্ট অথবা ক্যাম্পাস ফ্রন্ট— কেন্দ্রীয় নির্দেশে আপাতত নিষিদ্ধ হয়েছে সংগঠন। তাহলে ক্যাম্পাস ফ্রন্ট নেত্রী মাকসুরা কী করবেন? গোপনে সংগঠনের কাজই চালিয়ে যাবেন, না কি বাড়িতে বসে যাবেন? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্ন শুনে ফোন কেটে গেল জন্মদিনে মোদীকে চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানানো অধুনা নিষিদ্ধ সংগঠনের নেত্রী মাকসুরার।