বেআইনি: এ ভাবেই ট্রাকে করে পাচার করা হচ্ছিল উটগুলিকে। নিজস্ব চিত্র
ট্রাকের মধ্যে মাত্র কয়েক ফুট জায়গায় হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল বিরাট প্রাণীগুলিকে। ফলে কারও ঘাড় ভেঙেছে, কারও বা গুরুতর ভাবে জখম হয়েছে পা। মুখ দিয়ে লালা ঝরেছে অনবরত। লকডাউনের সময়ে প্রবল গরমে এ ভাবেই ১২-১৪ দিন ট্রাকে বন্দি ছিল ওরা। এমন ভাবেই রাজস্থান থেকে ট্রাকে চাপিয়ে পাচার হচ্ছিল ‘মরুজাহাজ’-এর দল। শুক্রবার রাতে ট্রাক-সহ সাতটি উট ধরা পড়ল বারুইপুর থানার পুলিশের হাতে। পুলিশের সন্দেহ, উট পাচারকারীদের চক্র সক্রিয় হয়েছে শহরতলি, এমনকি কলকাতাতেও।
যদিও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১১টি উট ধরা পড়েছিল। চারটি মারা গিয়েছে। পুলিশ অবশ্য উটের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেনি।
অসুস্থ উটগুলিকে বারুইপুর থানার অধীনে উত্তরভাগ এলাকার এক আশ্রমের খামারে রাখা হয়েছে। এই খবরে ক্ষুব্ধ গৃহপালিত পশুদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজস্থানের আবহাওয়া ছাড়া অন্যত্র উট বাঁচতে পারে না। তাই ২০১৫ সালেই রাজস্থানের বাইরে উট সরবরাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সেখানকার হাইকোর্ট। পরে পটনা ও কর্নাটক হাইকোর্ট জানায়, অন্য রাজ্য থেকে উট উদ্ধার হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে রাজস্থানের আইন মেনেই পদক্ষেপ করতে হবে।
সূত্রের খবর, উট পাচারের খবর বারুইপুরের পুলিশকে জানিয়েছিল পশুদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন। সেই মতো শুক্রবার নতুন বাজার এলাকায় নাকা-তল্লাশি করে উটবোঝাই ট্রাকটি আটক করে এবং চালক-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতেরা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। আটক হওয়া ট্রাকটি হরিয়ানার।
পুলিশি জেরায় ধৃতেরা কিছু জানে না বলে দাবি করেছে। উটগুলি রাজস্থানের কোথা থেকে আনা হয়েছিল তা দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, উটের মাংসের চাহিদা তেমন নেই ঠিকই, তবে ওই সব এলাকায় উট কেনা সামাজিক প্রতিপত্তির প্রকাশ। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি হাটে গরু-মোষের মতোই উট কেনাবেচা হয়।
ধৃতদের জেরা করে পাচার চক্রের নাগাল পেতে চাইছে পুলিশ। বারুইপুর পুলিশ জেলার এক কর্তা বলেন, “লকডাউন চলা সত্ত্বেও একের পর এক রাজ্যের সুরক্ষা বলয় এড়িয়ে কী ভাবে উট-সহ ট্রাক এল, তা দেখতে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ মহলে জানানো হবে।”
দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উটগুলির চিকিৎসায় ও রাজস্থানে ফেরত পাঠানোয় উদ্যোগী হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের অনুমতি নিয়ে উটগুলিকে ওই সংগঠনের হাতে দেওয়া হবে। সংগঠনের তরফে সুশান্ত ওঝা দিল্লি থেকে শনিবার বলেন, “অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডে বিষয়টি জানিয়েছি। ওই অঞ্চলে আরও কিছু উট লুকোনো আছে বলে খবর আছে। তার ছবিও রয়েছে। প্রশাসনকে অনুরোধ, উটগুলি খুঁজে বার করা হোক।”
উট উদ্ধারের পরে বারুইপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী সুব্রত দাস। তিনি জানান,
কলকাতার বন্দর এলাকায় পাচার হয়ে আসা উট লুকোনো আছে বলে খবর আছে। তিনি বলেন, “এই মামলায় অভিযুক্তদের জেল ও জরিমানা, দুই-ই হতে পারে। বারুইপুরের বকুলতলায় উট লুকিয়ে রাখা আছে। কোথায়, কবে থেকে এ সব হচ্ছে, তারিখ-সহ প্রশাসনকে জানিয়েছি।”