Sonali Chakravarti Banerjee

‘খারাপ খসড়া’, স্থগিত সোনালি মামলার রায়

রাজ্যপালের পদে থাকাকালীন জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের টানাপড়েনের মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫১
Share:

সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করে মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের অধীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিধানসভায় বিল পাশ করিয়েছে। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সেই আইনের খসড়া খুবই খারাপ ভাবে তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করলেন।

Advertisement

রাজ্যপালের পদে থাকাকালীন জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের টানাপড়েনের মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। কলকাতা হাই কোর্ট মঙ্গলবার সেই পুনর্নিয়োগের নির্দেশ ‘আইনসঙ্গত নয়’ বলে খারিজ করে দিয়েছিল। কলকাতা হাই কোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সোনালি নিজেও মামলা করেছিলেন। আজ শুনানির শেষে বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড ও বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ মামলার রায় পরে ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন।

উপাচার্য-পদে সোনালির প্রথম দফার মেয়াদ ২০২১ সালের ২৭ অগস্ট শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাঁকে পুনর্নিয়োগের জন্য রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে প্রস্তাব যায়। রাজ্যপাল রাজ্য প্রশাসনের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। তার উত্তর না-দিয়ে পর দিন থেকেই সোনালিকে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ করে রাজ্য। এর বিরুদ্ধেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, এই নিয়োগ ইউজিসি-র নিয়মবিরুদ্ধ। সর্বোপরি রাজ্যের এই ক্ষমতাই নেই। রাজ্যের যুক্তি ছিল, শিক্ষা আইনে সংশোধনের ফলে সরকার এই নিয়োগের ক্ষমতা পেয়েছে। আচার্য-রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত না-নেওয়ায় রাজ্য সরকারই সোনালিকে নিয়োগ করেছে।

Advertisement

আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিরা রাজ্যের কাছে জানতে চান, উপাচার্যকে পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা কি রাজ্য সরকারের রয়েছে? রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এই ক্ষমতা হয়েছে।’’ সিঙ্ঘভি যুক্তি দেন, কলকাতা হাই কোর্ট নিজেই তার রায়ে বলেছে, আইন অনুযায়ী উপাচার্যকে পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে আচার্যের অনুমতির প্রয়োজন নেই। কিন্তু শেষে রাজ্যের ক্ষমতা নেই বলে পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতিরাও তাঁর সঙ্গে একমত হন। সিঙ্ঘভি কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এ হল অপারেশন সাকসেসফুল বলে রোগী মারা গিয়েছে জানানো।’’

হাই কোর্টে মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী রঞ্জিত কুমার যুক্তি দেন, রাজ্য সরকারের পুনর্নিয়োগের যে নির্দেশিকা রয়েছে, তাতেও ত্রুটি রয়েছে। বিচারপতিরা সেই নির্দেশিকা দেখে বলেন, এ হল ‘কমেডি অব এরর্স’। রাজ্য সরকার আইনের ভুল ধারা তুলে নির্দেশিকা জারি করেছে। তাদের আচার্যের কাছে যাওয়ারই প্রয়োজন ছিল না। কুমার বলেন, ইউজিসি-র বিধি অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগ আচার্যই করবেন। আচার্য নিজে সিদ্ধান্ত না নিলেও তাঁকে এড়ানো যাবে না। সিঙ্ঘভি বলেন, পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে এই যুক্তি খাটে না। সোনালির হয়ে আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত বলেন, উপাচার্য পদে নিয়োগ, পুনর্নিয়োগ, মেয়াদ বৃদ্ধি, সাময়িক ভাবে নিয়োগ, প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম রয়েছে। সিঙ্ঘভি বলেন, আইনে সংশোধন করে আচার্যের হাতে থাকা ক্ষমতা রাজ্যের হাতে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বিচারপতিরা বলেন, সংশোধিত আইনে স্পষ্ট করে বলা নেই যে, কে নিয়োগ করবেন। বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার সন্তুষ্ট হলেই কেউ যোগ্য। কিন্তু তার ফলে কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। তাই আচার্যের হাতে ক্ষমতা থেকে গিয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এখানেই আইনের খসড়া খুব খারাপ ভাবে তৈরি হয়েছে। কুমার বলেন, আইন সংশোধনের ফলে রাজ্য সরকার সন্তুষ্ট হলেই কেউ যোগ্য হবেন। কিন্তু নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্যপালের থেকে নেওয়া হয়নি। ইউজিসি-র নিয়মও মানতে হবে। এর পরে বিচারপতিরা পরে রায় ঘোষণা হবে বলে জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement