হাই কোর্টের এ দিনের রায়ের পরে বেসরকারি স্কুলগুলির অভিভাবক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “২০২০ সালে আদালত যে-রায় দিয়েছিল, তা অমান্য করে বহু স্কুল ১০০ শতাংশ ফি নিয়েছে।
ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ করোনাকালে আদালতের নির্দেশে স্কুল ফি-তে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তবে নবপর্যায়ে পঠনপাঠন শুরু হওয়ার পরে রাজ্যের বেসরকারি স্কুলে আগামী মার্চ থেকে প্রাক্-অতিমারি পর্বের মতোই স্কুল ফি বা বেতন দিতে হবে অভিভাবকদের। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে।
অভিভাবকদের দায়ের করা একটি মামলার ভিত্তিতে অতিমারি পর্বে স্কুল ফি-তে যে-ছাড় (২০ শতাংশ) দেওয়া হয়েছিল, এ দিন তা তুলে নেওয়া হয়। কোর্টের পর্যবেক্ষণ, অতিমারি পর্ব কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। স্কুল খুলেছে, শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এই নতুন নির্দেশ।
উচ্চ আদালত এ দিন জানিয়েছে, ১ মার্চ থেকে স্কুলগুলি নিজস্ব নীতি অনুযায়ী ফি নিতে পারবে। কোনও ক্ষেত্রে বকেয়া টাকা নিয়ে স্কুল-কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকের মতপার্থক্য হলে স্কুলের দাবির ৫০ শতাংশ এবং অভিভাবক যতটা দিতে সম্মত, তার মধ্যে যেটি বেশি, সেই টাকা অভিভাবককে ১৫ মার্চের মধ্যে জমা দিতে হবে। তবে টাকা নিয়ে বিবাদ থাকলেও স্কুল কোনও পড়ুয়াকে পরীক্ষায় বসা থেকে বিরত করতে বা বহিষ্কার করতে পারবে না কিংবা মার্কশিট, শংসাপত্র আটকে রাখতে পারবে না। ফের শুনানি ২৫ মার্চ।
অতিমারি পর্বে স্কুল বন্ধ থাকলেও পুরো ফি নেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে মামলা হয়েছিল। ২০২০ সালের অক্টোবরে ফি কাঠামোয় কাটছাঁটের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে আদালত জানিয়ে দেয়, পরিবহণ এবং অন্যান্য ফি নেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে মোট ফি-র ৮০ শতাংশ দিতে হবে বলে জানায় কোর্ট। ফি আরও কমানোর আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন অভিভাবকদের একাংশ। কিন্তু ফি আর কমানো হয়নি। সম্প্রতি রাজ্যে স্কুল খুলে গিয়েছে। পড়ুয়ারা ফের স্কুলে গিয়ে ক্লাসে বসে পড়াশোনা করছে। এই পরিস্থিতিতে মামলাটি ফের শুনানির জন্য উঠেছিল।
অভিযোগ, নামী বেসরকারি স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করলেও অনেক অভিভাবকই অতিমারি পর্বে ফি দিতে রাজি ছিলেন না। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা বলা হলেও বহু সরকারি চাকুরে অভিভাবকও এই সুযোগে বেতন বকেয়া রেখেছেন। অথচ বেসরকারি স্কুলগুলির শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন অনেকটাই স্কুল ফি-র উপরে নির্ভরশীল। সে-ক্ষেত্রে তাঁরাও কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিলেন বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ।
হাই কোর্টের এ দিনের রায়ের পরে বেসরকারি স্কুলগুলির অভিভাবক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “২০২০ সালে আদালত যে-রায় দিয়েছিল, তা অমান্য করে বহু স্কুল ১০০ শতাংশ ফি নিয়েছে। আশা করেছিলাম, রায় অমান্য করায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তা হল না। আদালত এর আগে জানিয়েছিল, স্কুল খোলার এক মাস পর থেকে পুরো ফি নেওয়া যাবে। কিন্তু এ দিনের নির্দেশে আগামী ১ মার্চ থেকেই তা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’ এটা কেন হল, প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবক সমিতির ওই নেতা।