Sandeshkhali Incident

কার হেফাজতে থাকবেন শাহজাহান? হাই কোর্টে হল দীর্ঘ সওয়াল, ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিত রাখল রায়দান

সোমবার প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘তদন্তে যদি স্থগিতাদেশ থাকে তা হলে কী ভাবে শেখ শাহজাহানকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হল? কেন জেল হেফাজতে নেওয়া হল না?’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৪:৫৩
Share:

সন্দেশখালি মামলার রায়দান স্থগিত কলকাতা হাই কোর্টে। — ফাইল চিত্র।

কার হেফাজতে থাকবেন ধৃত শাহজাহান শেখ? সোমবার সন্দেশখালি মামলায় বার বার সেই প্রশ্নই উঠে এসেছে। সন্দেশখালি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখল আদালত। কবে এই মামলার রায় দেওয়া হবে তা এখনও জানানো হয়নি।

Advertisement

সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্তের ব্যাপারে স্থগিতাদেশের কথা আবারও জানালেন প্রধান বিচারপতি, তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশকে দিয়ে যে সিট গঠন করা হয়েছিল এবং গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ আছে। যদিও আমরা আগেই জানিয়েছিলাম যে শাহজাহান শেখকে গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।’’ উল্লেখ্য, হাই কোর্টের নির্দেশের পরই শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশ। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তিনি ছাড়াও উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘তদন্তে যদি স্থগিতাদেশ থাকে তা হলে কী ভাবে শেখ শাহজাহানকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হল? কেন জেল হেফাজতে নেওয়া হল না?’’ শাহজাহানকে জেল হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিও। সোমবার সওয়ালের সময় ইডি-র পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘১৫ দিন পরে সিবিআই চাইলেও তাঁকে (শেখ শাহজাহান) হেফাজতে নিতে পারবে না। দিন নষ্ট হবে।’’

Advertisement

সিবিআইয়ের পক্ষ থেকেও একই প্রশ্ন তোলা হয়েছে আদালতে। সিবিআইয়ের আইনজীবী প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আবেদন করেন, ‘‘সিবিআই শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়।’’ এ ছাড়াও তদন্তভার নিজেদের হাতে চেয়ে আর্জি করল সিবিআই। সেই একই দাবিতে সওয়াল করেছে ইডিও। তারা প্রশ্ন তোলে, ‘‘শাহজাহান-সহ বাকি যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। এই মামলা যদি সিবিআইকে হস্তান্তর করা না হয় তা হলে কী ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই?’’ সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করার সময় ইডির আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি কারণ রাজ্যের ক্ষমতাশালী মন্ত্রী এই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। শাহজাহান তৃণমূলের একজন সক্রিয় এবং প্রভাবশালী নেতা।’’

ইডির আইনজীবী সোমবার আরও বলেন, ‘‘এই আদালত তদন্তের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তার পরেও পুলিশ কেন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে? শাহজাহানকে জেল হেফাজতে পাঠানো হোক।’’ প্রধান বিচারপতিও শাহজাহানকে ‘পুলিশি হেফাজত’-এ রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘এই আদালত শুধু জানিয়েছিল যে গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।’’ শাহজাহানের আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘‘যদি তদন্তে স্থগিতাদেশ থাকে তা হলে আমার মক্কেলকে কেন হেফাজতে রাখা হবে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আর্থিক দুর্নীতি মামলায় আগাম জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে।’’

গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’র তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকেরা। সেই প্রসঙ্গ তুলে সোমবার প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হামলার দিন ন্যাজাট থানায় ইডির আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই প্রথম এফআইআর হয়েছিল। রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা হারানোর এটা একটা বড় কারণ বলে ইডি দাবি করছে।’’ ইডি এই প্রসঙ্গে বলে, ‘‘আমাদের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমরা তদন্ত করতে গিয়েছিলাম না কি শ্লীলতাহানি করতে?

রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে তদন্ত করতে চায় না বলে সোমবার আদালতে জানায় ইডি। তারা বলে, ‘‘গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছে রাজ্য পুলিশ। তাদের সঙ্গে যৌথ তদন্ত আমরা চাই না। তথ্য বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অভিযুক্তের সঙ্গে আছে রাজ্য পুলিশ।’’ তার পর আবারও শাহজাহানের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ টেনে আনে ইডি।

এই মামলার শুনানিতে আদালতে সওয়ালের সময় রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘রেশন দুর্নীতিতে ইসিআইআর দায়ের করে তদন্ত করছে ইডি। সেই তদন্তে কখনওই হস্তক্ষেপ করেনি রাজ্য পুলিশ। হামলার ঘটনায় যে অভিযোগ হয়েছিল শুধু মাত্র তারই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ছিল রাজ্য পুলিশ। সেই মামলা কেন সিবিআইকে হস্তান্তর করা হবে?’’

সোমবার আদালতে ইডির বিরুদ্ধে তদন্তে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ তুলেছে রাজ্য। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত সিট গঠন করে দেওয়ার পরে রাজ্য পুলিশ ইডির কাছে তাদের আক্রান্ত আধিকারিকদের নাম জানতে চেয়েছিল। তারা সহযোগিতা করেনি।’’ রাজ্য আরও বলে, ‘‘ইডির উপর হামলার দিনের ঘটনায় ন্যাজাট থানায় যে তিনটি এফআইআর হয়েছিল সেখানে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই।’’ পাল্টা রাজ্য পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে ইডি প্রশ্ন তুলে বলে, ‘‘স্থানীয় থানা যদি তদন্ত করতে সমর্থ হত তা হলে মামলা কেন সিআইডিকে হস্তান্তর করা হল?’’ সব পক্ষের সওয়াল-জবাবের শেষে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান স্থগিত রাখে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement