Calcutta High Court

Calcutta High Court: বৈদ্যুতিন প্রমাণে খুনের শাস্তি: জামিন দু’জনের

আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, আর-পাঁচটা মামলার থেকে এই মামলার চরিত্র একটু আলাদা। কারণ, খুনের মামলায় বৈদ্যুতিন সাক্ষ্যপ্রমাণ যে বড় হাতিয়ার হতে পারে, এখানেই প্রথম তার প্রমাণ মিলেছিল। কিন্তু শুধু বৈদ্যুতিন সাক্ষ্যপ্রমাণের নিরিখেই সাজা ঘোষণা করা যায় কি না, সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছে এই মামলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২ ০৭:০১
Share:

ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে বৈদ্যুতিন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে খুনের মামলায় সাজা দেওয়ার নজির গড়া ঘটনার বছর চারেক পরে দণ্ডিতদের দু’জনকে জামিন দিল কলকাতা হাই কোর্ট। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় তার তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল ব্যারাকপুরের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। ২০১৯ সালের সেই রায় এ রাজ্যে প্রথম। সেই রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত তিন যুবক জাহিদ হুসেন, মহম্মদ সরফরাজ ও মহম্মদ ওয়াকিল হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চ সম্প্রতি সরফরাজ আর ওয়াকিলকে জামিন দিয়েছে। কিন্তু জাহিদের জামিনের আবেদন খারিজ করেছে আদালত।

Advertisement

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রিন্স নামে জগদ্দলের বাসিন্দা, দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র নিখোঁজ হয়। পরে গঙ্গায় মেলে তার দেহ। পুলিশি সূত্রের খবর, প্রিন্স নিখোঁজ হওয়ার পরে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে তার পরিবারের কাছে ফোন আসে। সেই টাকা না-দেওয়ায় প্রিন্সকে খুন করা হয়। তদন্তে নেমে জাহিদ, ওয়াকিল ও সরফরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জাহিদ ও সরফরাজের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় হাই কোর্টে জানান, নিম্ন আদালতে সাক্ষীদের বয়ানে ফাঁক ছিল। সরকার পক্ষ খুনের ঘটনাস্থল হিসেবে জুবিলি ব্রিজকে চিহ্নিত করলেও তার পক্ষে প্রমাণ নেই। মামলার অন্যতম প্রমাণ হিসেবে নিহতের মোবাইল ফোনটি জাহিদের কাছ থেকে উদ্ধার করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়েও সংশয়ের অবকাশ আছে। ওয়াকিলের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী কোর্টে জানান, নিহতের মা এফআইআর বা তাঁর বয়ানে কোথাও ওয়াকিলের নাম বলেননি। দু’জন সাক্ষীর বয়ান নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি, এই মামলায় নিম্ন আদালতে যে-ভাবে বৈদ্যুতিন সাক্ষ্যপ্রমাণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

Advertisement

এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় পাল্টা সওয়ালে জানান, প্রিন্স ও জাহিদ যে একসঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল, সেই প্রমাণ আছে। কল ডিটেলস রেকর্ড এবং মোবাইল ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে প্রমাণ হয়েছে যে, প্রিন্সের মৃত্যুর পরে তার ফোন অভিযুক্তেরা ব্যবহার করেছে এবং সেই ফোন থেকেই প্রিন্সের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে। সেই ফোন উদ্ধার করে হয় জাহিদের কাছ থেকে। এ-সবই অপরাধের প্রমাণ বলে আদালতে জানান বিভাসবাবু।

ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, জাহিদের সঙ্গে ওই খুনের যোগ স্পষ্ট। কিন্তু সাক্ষীদের বয়ান বা প্রমাণ থেকে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, সরফরাজ-ওয়াকিল ওই ঘটনায় জড়িত। তাদের কৌঁসুলিরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। যে-হেতু সরফরাজ-ওয়াকিল চার বছর জেলে আছে এবং এই মামলার শুনানি দ্রুত শেষ হওয়ার নয়, তাই সব দিক বিচার করে কোর্ট ওই দু’জনকে ৪০ হাজার টাকার বন্ডে জামিনের নির্দেশ দেয়।

আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, আর-পাঁচটা মামলার থেকে এই মামলার চরিত্র একটু আলাদা। কারণ, খুনের মামলায় বৈদ্যুতিন সাক্ষ্যপ্রমাণ যে বড় হাতিয়ার হতে পারে, এখানেই প্রথম তার প্রমাণ মিলেছিল। কিন্তু শুধু বৈদ্যুতিন সাক্ষ্যপ্রমাণের নিরিখেই সাজা ঘোষণা করা যায় কি না, সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছে এই মামলা। হাই কোর্টে এই মামলার রায় কী হবে, সে-দিকে নজর আছে অনেকের। তাঁদের মতে, এই মামলার রায় পরে অন্যান্য মামলাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement