ফাইল চিত্র।
করোনা-আবহে গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও পুণ্যার্থী জলে নেমে স্নান করুন, তা চাইছে না কলকাতা হাইকোর্ট। মেলায় কিয়স্ক থেকে গঙ্গাসাগরের জল পাওয়ার বন্দোবস্ত করছে রাজ্য। হাইকোর্টের বিচারপতিদের মতে, করোনার সংক্রমণ আটকাতে সেখান থেকেই সবাই জল সংগ্রহ করুক।
একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী জলে নেমে স্নান করলে কোভিড ছড়াতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণন। এ দিনও আদালত বলেছে, কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি জলে নেমে এক সেকেন্ড ডুব দিলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
কিন্তু, জলে নামা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ শুক্রবারও হাইকোর্টের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, প্রয়োজনে যাঁরা ই-স্নান (অনলাইনে দর্শন, কিয়স্ক থেকে জল নেওয়া বা বাড়িতে বসে অর্ডার করে গঙ্গাসাগরের জল নেওয়া) করবেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা যেতে পারে। জলে নামা থেকে বিরত রাখতে মাইকে নিয়মিত ঘোষণা করতে হবে। অবিলম্বে এই ঘোষণা চালু করতেও বলেছে আদালত।
প্রশ্ন উঠেছে, যদি কেউ রাজ্যের ঘোষণা অগ্রাহ্য করে জলে নামেন, তখন কী হবে? সে বিষয়েও এ দিন প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে, এখনও চূড়ান্ত রায়ও দেননি তাঁরা। রাজ্য সরকার কী কী আয়োজন করেছে, তা নিয়ে মুখ্যসচিবকে আগামী বুধবার, ১৩ জানুয়ারি রিপোর্ট দিতে হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মেলার আয়োজন করা যাবে কি না, সে দিনই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত।
নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি সকাল থেকেই পুণ্য স্নান শুরু হবে। ১৩ জানুয়ারির মধ্যে বেশির ভাগ পুণ্যার্থীই সাগরদ্বীপে চলে যান। সে দিনই যদি হাইকোর্ট মেলা বন্ধের মতো কোনও অনুমতি দেয়, তখন কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আইনজীবীদের একাংশের মতে, রাজ্য যাতে ঠিক মতো নির্দেশ পালন করে, সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখতেই আদালত ১৩ জানুয়ারি মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিন ধার্য করেছে।
দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছট পুজোর মতো গঙ্গাসাগরে জনাসমাগম নিয়ে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন অজয়কুমার দে নামে এক ব্যক্তি। তাঁর কৌঁসুলি সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় আদালতকে জানিয়েছিলেন, গঙ্গাসাগরের জন্য রাজ্যে একটি পৃথক আইন আছে। সেই আইন বলে, মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় সাগরদ্বীপে বাইরে থেকে লোকের প্রবেশ বন্ধ করতে পারে রাজ্য।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতেই হাইকোর্ট রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তার রিপোর্ট তলব করেছিল। এ দিন সেই রিপোর্ট আদালতে জমা পড়ে। তাতে জানানো হয়, কোভিড বিধি অনুযায়ী স্ক্রিনিং, আরটিপিআর টেস্ট সেন্টার থাকছে। ই-দর্শনের ব্যবস্থা থাকছে। এমনকি, মানুষ ঘরে বসেই যাতে পাত্রে গঙ্গাসাগরের জল পেতে পারে তারও ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য-অধিকর্তার এই রিপোর্টে মোটের উপরে সন্তুষ্ট আদালত। সেই রিপোর্ট দেখার পরে এ দিন ই-স্নানের উপরে জোর এবং কোভিড প্রতিরোধ বিধি মেনে চলার উপরে জোর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন দুই বিচারপতি।
এ দিন বেলা দুটোয় প্রথম দফার শুনানি শুরু হয়। ই-স্নান কেন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, শবরীমালায় স্নান বন্ধ করা হলে এখানে হবে না কেন? রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, কিয়স্ক থেকে গঙ্গাসাগরের জল পাওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর কোর্টে জানান, ইতিমধ্যেই বহু পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরে রওনা দিয়েছেন।