বেলঘরিয়ায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ওই এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধ মামলা হয়। ফাইল চিত্র।
জামিন দিয়েছিল নিম্ন আদালত। অতিমারি পর্বে বেলঘরিয়ায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ওই এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর রূপালি সরকারের সেই জামিন বাতিল করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে রূপালিদেবীকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সেখানে তিনি ফের জামিনের আবেদন জানাতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে অপরাধের সঙ্গে কাউন্সিলরের ‘যোগসূত্র’ যথাযথ ভাবে বিবেচনা করে নিম্ন আদালত জামিনের ব্যাপারে নতুন ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, জামিন দেওয়া হয়েছিল ঘটনার গুরুত্ব বিচার না-করেই। বিচার-বিবেচনা ছাড়াই নিম্ন আদালত থেকে যে-ভাবে ওই তৃণমূল নেত্রীকে জামিন দেওয়া হয়েছে, সেটাকে ‘মিসক্যারেজ অব জাস্টিস’ বা ‘বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেছে হাই কোর্ট।
আদালতের খবর, ২০২০ সালের ৪ মে করোনাকালে সঙ্গীদের নিয়ে ত্রাণ বিলি করছিলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা, বামপন্থী সৌমেন দত্ত। অভিযোগ, তৎকালীন কাউন্সিলর রূপালিদেবী তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে সৌমেনের উপরে চড়াও হন এবং রড দিয়ে ওই যুবককে মারধর করেন। সৌমেন আহত হন। পুলিশ অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যুর চেষ্টার মামলা রুজু করে। ১৯ মে সৌমেন মারা যান। অভিযোগ, তার পরে খুনের ধারা যুক্ত করার আবেদন জানানো হলেও নিম্ন আদালতের বিচারক তা খারিজ করেন এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেন। সেই ধারায় চার্জশিট পেশের পরে সৌমেনের স্বজনদের তরফে হাই কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং হাই কোর্ট খুনের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।
আদালতের খবর, ওই বছর ১০ জুলাই রূপালিদেবী নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং সে-দিনেই তাঁকে জামিন দেন বিচারক। পরবর্তী কালে খুনের অভিযোগে চার্জশিট জমা পড়ার পরেও ফের নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন পেয়ে যান তিনি।
মামলাকারীর তরফে অরিন্দম জানা, সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, আকাশদীপ মুখোপাধ্যায়-সহ আইনজীবীরা হাই কোর্টে জানান, নিম্ন আদালতে অপরাধের গুরুত্ব এবং তাতে অভিযুক্তের ভূমিকা বিচার করা হয়নি। অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় কোর্টে জানান, তাঁর মক্কেল দু’বছর ধরে জামিনে রয়েছেন। তিনি জামিনের অপব্যবহার করেননি।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ার সূত্রে অভিযুক্ত কার্যত আইনের তোয়াক্কা করেননি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উল্লেখ রয়েছে যে, সৌমেনকে মারধরে রূপালিদেবীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তিনি সৌমেনকে কলার ধরে রাস্তার পাশে সরিয়ে আনেন এবং তাঁর সঙ্গীরা যুবককে মারধর শুরু করেন।