তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
নিয়োগ মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তদন্তে কী অগ্রগতি হয়েছে, ইডির কাছে জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। এক বার সমন পাঠিয়ে কেন আবার অভিষেককে তলব করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি সিংহ। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশ, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ইডিকে রিপোর্ট দিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ইডির ২৩ অগস্টের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘লিপ্স এন্ড বাউন্ডস’ কোম্পানির প্রাক্তন সিওও (চিফ অপারেটিং অফিসার) সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তাঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ওই কোম্পানির ‘সিইও’ হিসাবে উল্লেখ রয়েছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেকের নাম। প্রসঙ্গত, অভিষেক আমেরিকা থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পরেই ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তল্লাশি চালায়। যে বিষয়টি নিয়ে আগেই মুখ খুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থাটিকে ‘আমার সংস্থা’ বলে উল্লেখ করেন অভিষেকও। যদিও নির্বাচনী হলফনামায় ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর কোনও উল্লেখ ছিল না।
সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন, সুজয়কৃষ্ণকে ‘লিপ্স এন্ড বাউন্ডস’ সংস্থার ডিরেক্টর বলে উল্লেখ করেন মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি জানান, সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছে ইডি। কিন্তু ইডির প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অভিষেক এখনও কোম্পানির সিইও। তাঁকে এক বার তলব করেছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তিনি এ-ও জানান, অভিষেক এই মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে মামলা করেছেন। ওই মামলার শুনানিও শেষ হয়েছে। কিন্তু রায় ঘোষণা বাকি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
কিন্তু এই নিয়ে বিচারপতি সিংহের মন্তব্য, ‘‘কড়া পদক্ষেপ নয় মানে কি? তার মানে কি তদন্ত বন্ধ করে দেবেন? সুজয়কৃষ্ণ গ্রেফতার হলে কোম্পানির সিইও-র বিরুদ্ধে তদন্তের কী অগ্রগতি হয়েছে? কেন আপনারা আবার তলব করতে পারছেন না?’’
এর পর ইডির আইনজীবী জানান, তদন্তের প্রয়োজনে অভিষেককে আবার তলব করা হবে। বিচারপতি সিংহের মন্তব্য, “এত দিন ধরে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে এর আগে কেন তলব করেননি? এখন বলছেন করবেন? এটা কি তদন্ত হচ্ছে?’’
ঘটনাচক্রে, কয়েক দিন আগেই ইডি ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থায় তল্লাশি নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে অভিষেককে ওই সংস্থার ‘সিইও’ হিসাবে উল্লেখ করেছে তারা। মঙ্গলবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় সেই প্রসঙ্গই উঠে এল। অভিষেকের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি কী, তা-ও জানতে চাইলেন বিচারপতি।
বিচারপতি অমৃতা সিংহের পর্যবেক্ষণ, ইডির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই সংস্থার মারফত কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়ে অভিষেককে এক বার তলব করা হলেও কেন আর তলব করা হয়নি? নিয়োগ মামলায় ‘লিপ্স এন্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সিওও সুজয়কৃষ্ণ গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু কোম্পানির সিইও-র বিরুদ্ধে তদন্তের কী অগ্রগতি হয়েছে তা জানাতে হবে ইডিকে, নির্দেশ বিচারপতি সিংহের। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ সেপ্টেম্বর। সে দিনই ইডিকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ।