কলকাতা হাইকোর্ট।
হালিশহরের পুরপ্রধান অংশুমান রায়ের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা বৈঠকের উপর শুক্রবার অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। ওই পুরসভার কাউন্সিলর বন্ধুগোপাল সাহার দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় ২৩ জুলাই পর্যন্ত ওই স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। এ দিন বিকেল তিনটের সময় অনাস্থা বৈঠক ডেকেছিলেন ওই পুরসভার চেয়ারম্যান।
হাইকোর্টে যখন এই মামলা চলছে, তখন হালিশহরে কিন্তু অনাস্থা ভোট চলছে। বিকেল তিনটেতেই তা শুরু হয়। এর আগে তৃণমূল দাবি করেছিল, তাঁদের পক্ষে ১২ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। এ দিন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাসও বিজেপি থেকে তৃণমূল শিবিরে যোগ দেন। পুরপ্রধান অপসারণের বৈঠকে বিজেপির তরফ থেকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ পাইনি। পরে শুনেছি। তত ক্ষণে বৈঠক হয়ে গিয়েছিল। তবে আদালতের নির্দেশ তো মানতেই হবে। সবকিছু আইন মেনেই হবে।’’
মামলার আবেদনে কী বলেছেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর বন্ধুগোপাল? তাঁর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও সপ্তাংশু বসু জানান, ওই কাউন্সিলরের কাছে ১৭ জুলাই হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা আসে। তাতে লেখা ছিল, ১৬ জুলাই কয়েক জন কাউন্সিলর অংশুমানবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চেয়েছেন। তার ভিত্তিতে ১৯ তারিখ বিকেল তিনটের সময় অনাস্থা বৈঠক ডেকেছেন চেয়ারম্যান। ওই বার্তায় অনাস্থা বৈঠক ডাকার তারিখ দেওয়া ছিল ১৬ জুলাই।
মামলায় বন্ধুগোপাল অভিযোগ করেছেন, চেয়ারম্যান নিজেই নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চেয়েছেন। কারণ, তিনি নিজেও জানেন, তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হলেও তিনি জিতে যাবেন এবং পুর আইন অনুযায়ী পরবর্তী ছয় মাস তাঁর বিরুদ্ধে আর অনাস্থা আনা যাবে না। বিজেপিতে যোগ দেওয়া ওই কাউন্সিলরের বক্তব্য, পুরসভার ২৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের যদি সঙ্গত কারণে ছয় মাসের মধ্যে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চান, তা তাঁরা করতে পারবে না। সেই রাস্তা খোলা রাখার জন্যই হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন বন্ধুগোপাল।
এ দিন মামলার শুনানিতে বিকাশবাবু অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান নিজের বিরুদ্ধে নিজেই অনাস্থা আনতে চান। কোন কোন কাউন্সিলর তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চেয়েছেন, তার উল্লেখ হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় নেই। এই ভাবে অনাস্থা বৈঠকের নোটিস পাঠানো আইনসঙ্গত নয়। অনাস্থা নোটিস পাঠানোর তিন দিনের মধ্যেই অনাস্থা বৈঠক কেন সেই প্রশ্নও তোলেন বিকাশবাবু। তিনি জানান, নোটিস পাঠানোর পরে ১৫ দিন সময় দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। অনাস্থা বৈঠকের উপর স্থগিতাদেশ জারি করুক আদালত।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আদালতে দাবি করেন, অনাস্থা প্রস্তাব আনা ও অনাস্থার নোটিস জারি একই দিনে হলে আইনি বাধা নেই। মাত্র এক জন কাউন্সিলর এই ভাবে মামলা করে অনাস্থা বৈঠক আটকাতে পারেন না। তা ছাড়া চেয়ারম্যান তো কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হননি।
পরে অংশুমান বলেন, ‘‘আদালতকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। প্রথম কথা, আমি নিজে নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনিনি। আইন মেনে এক তৃতীয়াংশ কাউন্সিলরই অনাস্থা এনেছেন। নিয়ম মেনেই কাউন্সিলরদের ডাকযোগে বৈঠকের নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কেউ কেউ তা নেননি বলেই, তা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছিল।’’
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে অনাস্থা বৈঠকের উপর ২৩ জুলাই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেন। মামলার পরবর্তী শুনানিও ওই দিন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।