কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
মুর্শিদাবাদের রানিনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠনের সভায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার ডোমকলের মহকুমাশাসককে বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশ, পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠনের জন্য সভা ডেকে এখনই ভোটাভুটি করা যাবে না। আর পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী বোর্ড গঠন নিয়ে ইতিমধ্যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকলে তা কার্যকর হবে না। আদালতের নির্দেশের উপর স্থায়ী সমিতি গঠনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আপাতত আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন করা যাবে না বলে জানিয়েছে আদালত। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
কংগ্রেসের অভিযোগ, নিজেরা স্থায়ী সমিতি গঠন করতে চেয়ে বিরোধীদের নিশানা করছে শাসকদল। সোমবার দুপুর ১২টায় বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূলের সদস্যরা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলেও আদালতে অভিযোগ করে কংগ্রেস। উল্লেখ্য যে, কংগ্রেসের ছ’জন সদস্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারি এড়াতে তাঁরা পলাতক। আদালতে কংগ্রেস জানায়, ওই সদস্যরা ভোটাভুটিতে অংশ নিতে চান। স্থায়ী সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ৪২। এই পঞ্চায়েতে খাতায় কলমে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পরে কয়েক জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন।
রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী হওয়ায় গত শুক্রবার বিজয় সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বাম এবং কংগ্রেস। অভিযোগ, সেই সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বাধার মুখে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে একযোগে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের সমাবেশে যেতে বাধা দেন তৃণমূল কর্মীরাও। সমাবেশ থেকে ফেরার পথে এই ঘটনা নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, কংগ্রেস কর্মীরা রানিনগর থানায় ঢুকে তাণ্ডব চালান। থানা লক্ষ্য করে চলে তুমুল ইটবৃষ্টি। রাজ্য সড়কের পাশে তৃণমূলের পার্টি অফিস মান্নান হোসেন ভবনেও ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, রানিনগর থানার পুলিশকে সাহায্য করতে ডেকে পাঠানো হয় আশপাশের থানার পুলিশকর্মীদেরও। তার পর কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে এবং লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুদ্দুস আলি-সহ মোট ৩১ জন বাম এবং কংগ্রেস সমর্থককে। ধৃতদের শনিবারেই লালবাগ আদালতে পেশ করা হয়। আদালত কুদ্দুস-সহ ৩১ জনকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পুলিশের উপর দলীয় কর্মীদের ‘হামলা’র ঘটনায় ক্ষমা চান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তবু নিজের পুরনো অবস্থানে অনড় থেকে গত শনিবারও বহরমপুরের সাংসদ দাবি করেন, পুলিশ এবং তৃণমূলের লোকেরা পরিকল্পিত ভাবে কংগ্রেস কর্মীদের মারধর করে উত্তেজনা তৈরিতে ইন্ধন জুগিয়েছে। এর পাশাপাশি, ‘মিথ্যা মামলা’য় জেলে যাওয়া দলীয় কর্মীদের মুক্তির দাবিতে জেলা জুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন অধীর।