১৯১৭ সালে তৈরি হয়েছিল এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়েও একসময় এখানে রমরমিয়ে চলত চিকিৎসা। বহির্বিভাগে প্রতি দিন বসতেন ডাক্তাররা। এখন সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই দৈন্যদশা। দিনে দিনে কমতে থাকে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়েই মামলা চলছে হাই কোর্টে। নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়া গ্রামের হৈমবতী মুখোপাধ্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করল কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ।
১৯১৭ সালে তৈরি হয়েছিল এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়েও একসময় এখানে রমরমিয়ে চলত চিকিৎসা। বহির্বিভাগে প্রতি দিন বসতেন ডাক্তাররা। এখন সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই দৈন্যদশা। দিনে দিনে কমতে থাকে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা। বেশ কয়েক বছর ধরে ‘শেষ সম্বল’ বলতে ছিলেন এক জন চিকিৎসক। তিনিও অবসর নিয়েছেন। ফলে এখন সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার মতো নেই আর কেউই।
সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা চালু করতে এগিয়ে আসেন পাঁচড়া গ্রামেরই অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনে দরবার করলেন। চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু উত্তর আসেনি। অবশেষে ২০২০-এর মার্চ মাসে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন ওই শিক্ষক।
রাজ্য সরকারের এ প্রসঙ্গে যুক্তি ছিল যে, নতুন কোনও হাসপাতাল করতে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষের বসবাস দরকার। কিন্তু পাঁচড়ায় ২২ হাজার মানুষের বাস। বৃহস্পতিবার মামলাটি আদালতে উঠলে রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে হলফনামা চাওয়া হয়। কিসের ভিত্তিতে এই দাবি করছে রাজ্য তা জানতে চাওয়া হয়। রাজ্য সরকার যে ২২ হাজার মানুষের বসবাসের দাবি করছে তা প্রমাণ কোথায়, সেটাও জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার তা দিতে ব্যর্থ হয়। তখন আদালত রাজ্য সরকারকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। এর পরই রাজ্য জানায়, দশ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে তারা হলফনামা দেবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৬ এপ্রিল।
গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অধিগ্রহণের কোনও সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না রাজ্য সরকার। এর আগে নানা ভাবে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। শেষ পর্যন্ত শিক্ষক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এই মামলাটি করেন। তাঁর বয়স এখন ৯৩ বছর। তিনি শয্যাশায়ী। গুরুদাসবাবুর শেষ ইচ্ছা তিনি এই হাসপাতাল দেখে যেতে যান।”
আইনজীবী আরও বলেন, “রাজ্য সরকার একটা সময় বলে নতুন হাসপাতালে জন্য ৩০ হাজার মানুষের বাসস্থানের দরকার। কিন্তু এখানে ২২ হাজার মানুষের বাস। ২০১১ সালে জনগণনা হয়েছে। তার পর আর হয়নি। এর মধ্যে জনসংখ্যা বেড়েছে। আমরা রাজ্য সরকারকে বলেছিলাম এখানে জনসংখ্যা কত সেই প্রশ্ন আসছে কেন। এটা তো পুরনো হাসপাতাল। জেলা পরিষদ চালাতে পারছে না। তাই স্বাস্থ্য দফতরের উচিত এটিকে অধিগ্রহণ করা।”