২০১২ সালে ধনেখালি থানায় পুলিশের হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় শেখ নাসিরউদ্দিনের। ওই মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন ওঠে। সেই সময় বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চলে শোরগোল। ওই মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবিতে এবং পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে।
নিজস্ব চিত্র।
১০ বছর আগের একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির কাজ নিয়ে রীতিমতো তুলোধনা করলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের সাধারণ মানুষ অনেক সময় পুলিশের তদন্তে খুশি হন না! সেই কারণে তাঁরা সিবিআইয়ের উপর ভরসা রাখেন। সেই সিবিআইয়ের এই ধরনের তদন্ত আদালতকে আশ্চর্য করেছে।’’ বিচারপতি ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থার যদি এই হাল হয় মানুষ কার উপর ভরসা করবে?’’ পাশাপাশি, ওই ঘটনাটি অনুসন্ধানের জন্য সিবিআইয়ের দিল্লি শাখাকে দায়িত্ব দিয়েছে আদালত।
২০১২ সালে ধনেখালি থানায় পুলিশের হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় শেখ নাসিরউদ্দিনের। ওই মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন ওঠে। সেই সময় বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চলে শোরগোল। ওই মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবিতে এবং পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। ২০১৩ সালে কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই মতো বেশ কয়েক বছর ধরে নাসিরের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করে সিবিআই।
২০১৯ সালে নিম্ন আদালতে ওই ঘটনার চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। চার্জশিটে পুলিশের গাফিলতির কথা উল্লেখ থাকলেও খুনের কথা বলা হয়নি। যা মিথ্যা বলে দাবি করেন নাসিরউদ্দিনের স্ত্রী মানুজা বিবি। তিনি সিবিআইয়ের তদন্তে অখুশি হয়ে ফের হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে সওয়াল করেন, ‘‘সিবিআই শুধু ৩০৪ (এ) ধারায় পুলিশের গাফিলতির কথা বলেছে। খুনের কথা বলেনি। অনিচ্ছাকৃত হত্যা বলা হচ্ছে। এই ঘটনায় তদন্তও ঠিক মতো করা হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের নাম এই ঘটনায় জড়িয়েছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি সিবিআই। তা ছাড়া নাসিরউদ্দিনের মৃত্যুর অনেক তথ্য ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। দায়সারা ভাবে করা হয়েছে এই তদন্ত।’’
আদালতও এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের গাফিলতি খুঁজে পায়। অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি ঘোষ। সিবিআইয়ের দিল্লি অফিসকে এই বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন তিনি। তাঁর নির্দেশ, চার সপ্তাহের মধ্যে এই ঘটনার অনুসন্ধান করবেন দিল্লি অফিসের ডিআইজি পদমর্যাদার কোনও অফিসার। এই বিষয়ে আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে ওই অফিসারকে একটি রিপোর্ট জমা দিতে হবে আদালতে।