কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র তৃতীয় রিপোর্টেও সন্তুষ্ট নয় কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ এখনও পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি এসএসসি। ফের অবস্থান স্পষ্ট করার সুযোগ দিল হাই কোর্ট। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আগামী দু’দিনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে চতুর্থ রিপোর্ট জমা দিতে হবে এসএসসি-কে। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
হাই কোর্টের নির্দেশে গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি এবং নবম-দশমের অনেকের চাকরি বাতিল হয়। চাকরিহারাদের একাংশ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ফেরত পাঠায়। প্রথম দিনের শুনানিতেই হাই কোর্ট এসএসসি-কে বলেছিল, অবস্থান জানিয়ে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। অনিয়মের ঘটনা ঘটলে তারা কী করে এবং এ ক্ষেত্রে তারা কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানতে চায় আদালত।
সোমবার এসএসসি জানায়, সিবিআই তদন্তের ভিত্তিতে এবং হাই কোর্টের নির্দেশে নবম-দশমে ৯৫২ জনের সুপারিশপত্র বাতিল করেছে তারা। ওই ৯৫২ জনের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটে ‘অনিয়মের’ বিষয়টি স্বীকার করে নেয় এসএসসি। তবে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে কিসের ভিত্তিতে সুপারিশপত্র বাতিল করা হয়েছে, তার সদুত্তর দিতে পারেনি এসএসসি। এসএসসির উত্তরে অসন্তুষ্ট ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আদালত কী বলেছে, তার থেকেও বড় কথা আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? বিচারপতি বসাক এসএসসি-র আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনারা অনেক কিছু লুকোনোর চেষ্টা করছেন।”এসএসসি আদালতে জানায়, তারা সিবিআইয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের কাছে এই বিষয়ে আলাদা করে কোনও তথ্য নেই। হাই কোর্ট তখন জানতে চায় যে, সিবিআই পরে অনিয়ম খুঁজে না পেলে কি ওই প্রার্থীদের সুপারিশপত্র আবার ফিরিয়ে দেবে এসএসসি? প্রসঙ্গত, স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে সুপারিশপত্র দিয়ে থাকে এসএসসি। তার পরে নিয়োগপত্র দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
এর আগে গত বুধবার হাই কোর্ট এসএসসি-র উদ্দেশে বলেছিল, চাকরির সুপারিশপত্র বাতিল নিয়ে দু’টি অবস্থান নয়। এসএসসি-র কাছ থেকে এক এবং একটি নির্দিষ্ট অবস্থান জানতে চায় তারা। হাই কোর্ট জানায়, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কাজ করানো হয়েছে, আদালতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ যেন আর না ওঠে। বুধবার বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি রসিদির ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য ছিল, কেন চাকরি বাতিল করা হয়েছিল? এখন চাকরি বাতিল নিয়ে তাদের কী অবস্থান এসএসসি-কে নতুন করে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে হবে। হাই কোর্ট আরও জানায়, ১৫ তারিখ সকল সদস্যকে নিয়ে বৈঠক করতে হবে এসএসসি-কে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে চূড়ান্ত অবস্থান নিতে হবে তাদের। তার পরে আগামী ১৮ তারিখের মধ্যে তারা হলফনামা দাখিল করবে। সেই মতোই সোমবার ফের হলফনামা দাখিল করে এসএসসি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি-র গ্ৰুপ-সি, গ্ৰুপ-ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সব মামলার শুনানি চলছে হাই কোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে। এর আগে এই মামলায় কয়েক হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা স্থগিত হয়ে গেলেও কিসের ভিত্তিতে এসএসসি চাকরির সুপারিশপত্র বাতিল করেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তা নিয়ে তাদের হলফনামা চায় উচ্চ আদালত। বুধবার হলফনামা কোর্টে জমা পড়ে। বিচারপতি বসাক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, এর আগে আদালতের নির্দেশে না কি, স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে এসএসসি সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করেছিল ওই হলফনামায় তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। বিচারপতি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, নতুন করে বৈঠক করে আবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে এসএসসি-কে। তা না হলে আগামীতে আদালত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, অন্যের ঘাড়ে চেপে ঘুরে না বেরিয়ে দ্রুত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুক এসএসসি। তবে সোমবার এসএসসি-র নতুন রিপোর্ট বা হলফনামাতেও সন্তুষ্ট হল না হাই কোর্ট।