কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে বিস্ফোরণ কাণ্ডে এনআইএ-র উপরে হামলার ঘটনায় মূল যে অভিযুক্ত, সেই মনোব্রত জানার স্ত্রীর করা অভিযোগের ভিত্তিতেই স্থানীয় পুলিশ এনআইএ-র বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছে। বুধবার এই কথা শুনে কার্যত বিস্ময় প্রকাশ করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। উল্লেখ্য, মনোব্রতকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে এনআইএ।
এ দিন আদালতে পুলিশের উদ্দেশে বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, “যাঁর (মনোব্রত) বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, তাঁর স্ত্রী এসে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল, আর সঙ্গে সঙ্গে তার ভিত্তিতে এফআইআর করে দিলেন! কোনও তদন্ত করা হল না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হল না!”
বিচারপতি সেনগুপ্ত এ দিন রাজ্যের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “মনোব্রতর স্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, সেখানে পুলিশ কী ভাবে ৩২৫ ধারা যুক্ত করল? ৩২৫ ধারা সাধারণত গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে যুক্ত করা হয়। কিন্তু মনোব্রতর হাতে একটু আঁচড় লেগেছিল বলেই তো জানা যাচ্ছে। তাঁর শরীরে তো কোনও রকম গুরুতর আঘাতের চিহ্ন নেই।” রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এর উত্তর দিতে পারেননি।
এনআইএ তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর করার পরে হাই কোর্টে যায়। বুধবার বিচারপতি সেনগুপ্তের নির্দেশ, এনআইএ-র বিরুদ্ধে গ্রেফতার বা অন্য কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না এই মামলায়। কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা আগে নোটিস দিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে এনআইএ-র আধিকারিককে পুলিশ চাইলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
রাজ্যকে দু’টি এফআইআর (একটি এনআইএ-র করা, অন্যটি মনোব্রতের স্ত্রীর)-এর ব্যাপারে বক্তব্য সাত দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পরের এক সপ্তাহে এনআইএ বক্তব্য জানাবে। ২৯ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি। কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার বার বার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের নানা ভাবে হেনস্থার নালিশ করেন এ দিন। সন্দেশখালিতে ইডি-র উপরে হামলার প্রসঙ্গও ওঠে। তিনি বলেন, “ভূপতিনগরে এনআইএ-র উপরে হামলার ঘটনার তদন্তভার সিবিআইকে দিক কোর্ট। সিবিআই তদন্ত করতে প্রস্তুত।”
ভূপতিনগরে ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বরের বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল সেখানে তদন্তে গিয়ে আধিকারিকেরা আক্রান্ত হন, এ দিন কোর্টে বলেন এনআইএ-র আইনজীবী অরুণ মাইতি। রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ জানান, পুলিশ আক্রান্ত আধিকারিক ডিডি ছেত্রীকে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেই দেখা করতে সমন পাঠিয়েছে। চাওয়া হয়েছে তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট, ভাঙচুর হওয়া গাড়ি ও সিসিটিভি ফুটেজ।