প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের মামলাতেও সোমবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে সোমবারই সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিবিআইকে বিচারপতি এ-ও বলেন, মানিক তদন্তে সহযোগিতা না করলে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। তার পরই সোমবার সন্ধ্যায় সিবিআই দফতরে তিনি হাজিরা দেন।
২০১৪ সালে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই মতো টেটের পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। ফলপ্রকাশ হয় ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে। ওই বছরই প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। পরের বছর অর্থাৎ, ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বা অতিরিক্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগে প্রায় ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৪২ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষকে হিসাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।
বেআইনি ভাবে দ্বিতীয় প্যানেল প্রকাশ করা হয়েছে, এই দাবিতে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন রমেশ আলি নামে এক ব্যক্তি। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত আদালতকে জানান, বেআইনি ভাবে দ্বিতীয় প্যানেল প্রকাশ করার উদ্দেশ্য ছিল অতিরিক্ত প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া। ওই দ্বিতীয় তালিকায় শুধুমাত্র হুগলিরই ৬৮ জনকে চাকরি দেওয়া হয়।
মামলাকারীর বক্তব্যের ভিত্তিতেই আদালত প্রশ্ন তোলে, একটি নিয়োগের ক্ষেত্রে দু'টি মেধাতালিকা বা প্যানেল প্রকাশ করা যায় কি না। তার উত্তরে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আইনজীবী জানান, দ্বিতীয় বা অন্য প্যানেল বার করার নিয়ম সংসদের আইনে নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্যানেল বার করা জরুরি হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রেও তাই দ্বিতীয় প্যানেল বার করা হয়েছিল। ওই আইনজীবীর যুক্তি, ওই পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ভুল ছিল। সেই কারণে বাড়তি এক নম্বর দেওয়ার দাবি উঠেছিল। তিনি আরও জানান, যাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের তরফে কোনও আপত্তি আসেনি। কিন্তু পরে বেশ কয়েক জন বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ফলে তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতেই ২৬৯ জনের এক নম্বর করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়।
এর পরেই আদালত প্রশ্ন তোলে, বাকি চাকরিপ্রার্থীদের কি এক নম্বর করে বাড়ানো হয়েছিল? ওই নম্বর বাড়ানোর বিষয়টি কি সংসদের ওয়েবসাইট বা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল? উত্তরে সংসদের আইনজীবী জানান, সকলের নম্বর বাড়ানো হয়নি। যাঁরা আবেদন করেছিলেন, শুধু তাঁদেরই নম্বর বাড়ানো হয়েছিল।
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়নি উচ্চ আদালত। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, বেআইনি ভাবেই প্রকাশ করা হয়েছিল ওই দ্বিতীয় তালিকা। এর পরেই দ্বিতীয় মেধাতালিকার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সংসদ সভাপতি মানিক এবং সম্পাদক রত্না চক্রবর্তী বাগচিকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে বলেন বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে তাঁদের সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে হবে। মানিকরা তদন্তে সহযোগিতা না করলে তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার স্বাধীনতাও সিবিআইকে দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে উচ্চ আদালত জানিয়েছে, সিবিআই চাইলে আবার এফআইআর করেও তদন্ত শুরু করতে পারে।
এরই সঙ্গে ওই ২৬৯ জন চাকরিরতকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, তাঁরা মঙ্গলবার থেকে আর স্কুলে ঢুকতে পারবেন না। আদালতের আরও নির্দেশ, ন্যাশনাল ইনফরমেটিভ সেন্টার (এনআইসি)-কে এই মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, নথি সংগ্রহ করতে হবে। সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে নিরাপদ জায়গায়। এনআইসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হল সিবিআইকে।