কর্মশিক্ষা এবং শারীরশিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে ফের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল ছবি।
স্কুলে কর্মশিক্ষা এবং শারীরশিক্ষার শিক্ষক নিয়োগে আবারও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আপাতত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনও রকম নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে পারবে না রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। শুক্রবার এই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশের পর, শুক্রবারই কমিশনের আইনজীবী আদালতকে জানিয়ে দেন, বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের হয়ে আর সওয়াল করবে না কমিশন।
কর্মশিক্ষা এবং শারীরশিক্ষার জন্য যাঁরা ইতিমধ্যে সুপারিশপত্র পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদেরও নিয়োগপত্র দিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে নিষেধ করল হাই কোর্ট। পাশাপাশি শূন্যপদ নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানতে চেয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল। আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে এই হলফনামা জমা দিতে হবে। ৩০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি।
এ দিকে শুক্রবার আদালতে প্রশ্নের মুখে পিছু হটল স্কুল সার্ভিস কমিশন। জানিয়ে দিল, অতিরিক্ত শূন্যপদে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগের আবেদন তারা প্রত্যাহার করবে। কমিশনের আইনজীবী জানিয়েছেন, এই বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের থেকে লিখিত নির্দেশিকাও এসেছে।
সম্প্রতি আদালতে নতুন চারটি হলফনামা দাখিল করে কমিশন। সেখানে আবেদন করে যে, চাকরি বাতিল হয়েছে যে প্রার্থীদের, তাঁদের রাজ্যের তৈরি করা অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হোক। কমিশন যখন এই কথা বলে, তখন তাদের উল্টো পথে হাঁটে রাজ্য। আদালতে জানায়, তারা কমিশনের এই অবস্থানের বিপক্ষে। অযোগ্যদের নিয়োগের পক্ষে রাজ্য সরকার নয়।
রাজ্য এবং কমিশনের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি বসু। তিনি বলেন, কমিশনের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপের কথা ভাবছে রাজ্য, তা জানাতে হবে শুক্রবার। বিচারপতি এমন মন্তব্যও করেন যে, রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের অবস্থান যদি এক না হয়, তা হলে কমিশনকে ভেঙে দেওয়া হোক।
মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য শুক্রবার আদালতে দাবি করেন, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করার অধিকার রাজ্যের নেই। অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় পাল্টা সওয়াল করেন, প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি হলে রাজ্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করতে পারে। এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বসু বলেন, ‘‘আপনাদের যা ইচ্ছা করুন, আমি শুধু ছাত্রদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত।’’ তখনই বাম আমলে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ। বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক জমানাতে শিক্ষার অবক্ষয় হয়েছে। একটা সরকার ইংরেজি বন্ধ করে দিয়েছিল, এটা খুব বড় ভুল ছিল।’’ এই বিষয়ে সহমত পোষণ করে বিচারপতি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এটা বড় ভুল।’’
শুনানিতে বিচারপতি কমিশনকে প্রশ্ন করেন, ‘‘সবাইকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে?’’ জবাবে কমিশন জানায়, কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার ক্ষেত্রে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে। কর্মশিক্ষায় ৫৮৫ শূন্যপদের মধ্যে ৫১৪ জনকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে এবং শারীরশিক্ষায় ৮২৪ শূন্যপদের মধ্যে ৭৬৬ জনকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগপত্র দিয়েছে কি না, প্রশ্ন করেন বিচারপতি। জবাবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী বলেন, ‘‘না, আপনি মৌখিক নির্দেশে নিয়োগপত্র দিতে বারণ করেছিলেন, তাই পর্ষদ কোনও নিয়োগপত্র দেয়নি।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় এসএসসি। পরে ২০১৭ সালের জুন মাসে শুধু মাত্র কর্মশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের মার্চে ইন্টারভিউ (পার্সোনালিটি টেস্ট) হয়। চলতি বছরের অক্টোবরে শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষা বিষয়ে অতিরিক্ত পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এসএসসি। তার পরেই একটি মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদেরই এক জন সোমা রায়। তাঁর অভিযোগ, গত ৩ নভেম্বর কর্মশিক্ষা বিষয়ে যে ‘ওয়েটিং লিস্ট’ প্রকাশ করে এসএসসি, তাতে তাঁর নাম নেই। তিনি তফসিলি জাতিভুক্ত। পরীক্ষা এবং পার্সোনালিটি টেস্ট মিলিয়ে ৭২ নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু ‘অ্যাকাডেমিক স্কোরে’ ২২-এর পরিবর্তে তাঁকে ১৮ নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সোমা।
হাই কোর্টে সোমা দাবি করেন, তিনি লিখিত পরীক্ষায় ৫৪ পেয়েছেন। অ্যাকাডেমিক স্কোরে ২২ পাওয়ার পর তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৭৬ হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয়েছে ৭২ নম্বর। পাশাপাশি পার্সোনালিটি টেস্টের নম্বরও যোগ করা হয়নি।