দলত্যাগ থেকে শাখার স্বাতন্ত্র্য, বিতর্ক বৈঠকে

ভয় বা প্রলোভনে দলের জনপ্রতিনিধিদের একাংশের দলত্যাগ নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠল সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে। সাম্প্রতিক কালে বাম শরিক দলের বেশ কয়েক জন এবং সিপিএমের দুই বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

ভয় বা প্রলোভনে দলের জনপ্রতিনিধিদের একাংশের দলত্যাগ নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠল সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে। সাম্প্রতিক কালে বাম শরিক দলের বেশ কয়েক জন এবং সিপিএমের দুই বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিধানসভা ভোটের আগে আরও কয়েক জনের দল বদলের সম্ভাবনা নিয়েও গুঞ্জন তীব্র। এই অবস্থায় দু’দিনের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি এই প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দলের আদর্শের জোর যে এখন সে ভাবে খাটছে না, এই সব ঘটনাতেই তা বোঝা যাচ্ছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও মেনে নিয়েছেন, দলের একাংশের মধ্যে এই ধরনের বিচ্যুতি এড়ানো যাচ্ছে না।

Advertisement

বস্তুত, শুধু দল বদলই নয়, দলের সদস্যদের একাংশের কাজকর্মের নৈতিকতা নিয়ে যে বহু দিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন ইয়েচুরি। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকার সময়েই বেশ কিছু বেনোজল দলে ঢুকে পড়েছিল। তখনও অনেককে বহিষ্কার করতে হত। তার পরেও ধারাবাহিক ভাবে এই ত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’’ গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে নেতাদের পছন্দ-অপছন্দ চাপিয়ে দেওয়া নিয়েও এ বারের বৈঠকে প্রভূত অভিযোগ শুনতে হয়েছে ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটদের। যার প্রেক্ষিতে ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা বা যে কোনও বিষয়েরই ভারসাম্য থাকা দরকার। দলের মধ্যে গণতন্ত্র আছে বলেই সিপিএমে নেতাদের এত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। ভূ-ভারতে আর কোনও দলে এমন আলোচনা সম্ভব?’’

প্রকাশ্যে তেমন কোনও মন্তব্য না করলেও দলে আদর্শচ্যুতির সঙ্কট নিয়ে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য যথেষ্ট উদ্বেগেই ভুগছেন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সাধারণ ঘর থেকে যে লোকজন এক সময়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বামপন্থী দলে এসেছিলেন, তাঁদের টাকা-পয়সা, সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে এখনকার শাসক দলের সঙ্গে এঁটে ওঠার মতো আমাদের হাতে কিছু নেই! তৃণমূল যখন তাঁদের কাছে লাখ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছে, তখন তাঁদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ‘না’ বলতে পারছেন না। শুধু আদর্শের কথা বলে সকলকে দলে টেনে রাখা এখন মুশকিল হচ্ছে।’’

Advertisement

এরই পাশাপাশি, গণসংগঠনের প্রতি সিপিএম নেতৃত্বের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে। সিপিএম সূত্রের খবর, এই প্রশ্নে এ দিন সব চেয়ে সরব ছিলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস। বৈঠকে তাঁর বক্তব্য, ছাত্র সংগঠন থেকে কারা সিপিএমে দায়িত্ব পাবেন, সেটা এখন নির্ভর করে নেতাদের আশপাশে কারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তার উপরে! গণসংগঠন নিজেদের কাজে কাকে কোন দায়িত্ব দেবে, সেটাও অনেক সময় উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভাল কমিউনিস্ট হতে গেলে ভাল মানুষ হওয়া দরকার, এই কথাটা শুধু নিচু তলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হচ্ছে! দেবজ্যোতির ওই অভিযোগে বৈঠকে শোরগোল পড়ে যায়। পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও তাঁকে আলাদা করে ডেকে কথা বলেন। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লাও এ দিন বৈঠকে আক্ষেপ করেন, সিঙ্গুর থেকে শালবনি পদযাত্রা বা কাকদ্বীপ থেকে কামদুনি সাইকেল-যাত্রার পরিকল্পনা গণসংগঠনের স্তরেই হয়েছিল। অথচ বিষয়টা ‘সিপিএমের কর্মসূচি’ হিসাবে বাইরে এল। তাঁর অভিযোগ, গণসংগঠনের পৃথক অস্তিত্ব স্বীকার করতে সিপিএমের নেতাদের একাংশেরই অনীহা রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement