লাথির আঘাতে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান জয়প্রকাশ।
রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রে চলছে উপনির্বাচন — কালিয়াগঞ্জ, খড়্গপুর সদর এবং করিমপুর। অন্য দুই কেন্দ্র থেকে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও বড় গন্ডগোলের খবর না-পাওয়া গেলেও করিমপুরে বিজেপি প্রার্থীকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে রাস্তায় ফেলে কিল-চড়ের পাশাপাশি লাথি মেরে ঝোপের ভিতর ফেলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে উপনির্বাচন চলাকালীন ঘটনাটি ঘটেছে করিমপুরের পিপুলখোলায়। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই জয়প্রকাশকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে বিজেপির অভিযোগ। তৃণমূল যদিও এই মারধরেরর সঙ্গে তাদের যোগাযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিজেপির অভিযোগ, এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ পিপুলখোলার গিয়াঘাট ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে যান জয়প্রকাশ। সেই সময় তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একদল লোক। এলোপাথাড়ি লাথি-কিল-চড় মারা হয় তাঁকে। লাথির আঘাতে টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার পাশের একটি ঝোপের ভিতর পড়ে যান জয়প্রকাশ। তার পরেও নিগ্রহ থামেনি। পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে।
গোটা ঘটনার পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জয়প্রকাশ। তাঁর অভিযোগ, বুথ লাগোয়া একটি জায়গায় ২০-২৫ জনের একটি দল বসে ছিল। তাঁরা সেখানে কী করছেন, জানতে চাইলে জবাব আসে, প্রিসাইডিং অফিসারের জন্য রান্নার কাজ চলছে। এ নিয়ে আরও প্রশ্ন করতেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ২০-২৫ জনের দল। জয়প্রকাশের কথায়, ‘‘ভোট লুঠে বাধা দেওয়াতেই মারধর করা হয় আমাকে। নির্বাচন কমিশনকে সব জানিয়েছি। গুন্ডা নামিয়ে নির্বাচন করানো হচ্ছে। ভিডিয়ো মিথ্যা বলে না।’’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশের বিরুদ্ধেও নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন তিনি। তাঁর দাবি, চোখের সামনে সবকিছু ঘটতে দেখেও বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি কেউ। তিনি মার খেয়ে পড়ে যাওয়ার পরই সক্রিয়তা দেখায় পুলিশ। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র গুন্ডাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলেন জয়প্রকাশ।
বিজেপির তরফে হামলাকারীদের তারেক শেখ, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, কামালউদ্দিন বিশ্বাস, দুখু মলিথা, খুদা বখস শেখ, দিনারুল বিশ্বাস, মাসাদুল আলম, বঙ্কিম মণ্ডল এবং হাবিব বিশ্বাস বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের কর্মী বলে অভিযোগ তুলেছে তারা। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব তা খারিজ করেছেন।
আরও পড়ুন: রাজ্যে তিন কেন্দ্রে আজ উপনির্বাচন, পরীক্ষা তৃণমূল-বিজেপিরও
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও এমন ঘটনা একাধিক বার ঘটেছে। কিন্তু তৃণমূল এত নীচে নামবে, প্রার্থীকেও ছাড়বে না, তা ভাবিনি। ঘটনার সময় পুালিশ কোথায় ছিল? কেন বাধা দিল না? পাশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র বলে আর কিছু নেই। মানুষ এর জবাব দেবেন।’’
বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে যত নির্বাচন দেখেছি, কখনও দেখিনি প্রার্থীকে মারতে মারতে ঝোপের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল-কংগ্রেসের বহিরাগতরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। অবিলম্বে জেলাশাসককে গ্রেফতার করা উচিত। কারণ তিনিই তো এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার।’’
তৃণমূল যদিও এই ঘটনায় তাদের দলের কেউ জড়িত বলে মানতে নারাজ। বরং ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায় বলছেন, জয়প্রকাশ ‘নাটক’ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অভিনয় করতে ভালবাসেন উনি। তাই নাটক করছেন।’’
১. মারধর জয়প্রকাশকে, ২. লাথির আঘাতে ঝোপের মধ্যে জয়প্রকাশ, ৩. ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে জয়প্রকাশকে, ৪. ঝোপের মধ্যে জয়প্রকাশ।
আরও পড়ুন: ১৭০ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে দাবি দেবেন্দ্র ফডণবীসের
একই কথা বলছেন নদিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘টিভি-ক্যামেরা ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বিজেপি। সকাল থেকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। ভোট প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেন। জন সমর্থন নেই, পরাজয় নিশ্চিত জেনে সহানুভূতি কুড়োতে এই ঘটনা ঘটানো হয়। তৃণমূল এই ধরনের ঘটনা সমর্থন করে না। আমাদের কেউ এই ঘটনায় জড়িত নেই। এই পরিকল্পনার জবাব সাধারণ মানুষ ভোটের মাধ্যমেই দেবেন।’’
বিষয়টি নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীর অরোরাকে এ দিনই চিঠি দেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তার একটি কপি পাঠানো হয় এ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আজিজ আফতাবকেও। সেটি হাতে পেয়েই আরিজ আফতাবকে ফোন করেন উপ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। জয়প্রকাশ কে মারধরের ঘটনা এবং রাজ্যের উপ নির্বাচন নিয়ে সবিস্তারে জানতে চান তিনি। অভিযোগ খতিয়ে দেখে আরিজ আফতাবকে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর পরেই, জয়প্রকাশকে নিগ্রহের ঘটনায় জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে পাঠায় রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর। তাতে বলা হয়, জয়প্রকাশকে নিরাপত্তা দিতে চেয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বীকার করেন। এ দিন ঘটনার পরই পুলিশ এবং এসডিপিও ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং ১ জনকে আটক করা হয় বলেও জানানো হয়।