ভোটারদের লাইন। ছবি: পিটিআই।
মানিকতলায় ৮৯টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাল বিজেপি। পদ্মশিবির যে তালিকা নির্বাচন কমিশনে দিয়েছে, তাতে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডও রয়েছে। বিজেপির বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে ওই ওয়ার্ডে তারা সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূলের থেকে। বিজেপির দেওয়া তালিকায় ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি বুথও রয়েছে।
রাজ্যে চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটদানের গড় হার ৬২.৭১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে রায়গঞ্জে। এই কেন্দ্রে ভোটদানের হার ৬৭.১২ শতাংশ। এ ছাড়াও রানাঘাট দক্ষিণে ৬৫.৩৭ শতাংশ, বাগদায় ৬৫.১৫ শতাংশ এবং মানিকতলায় ৫১.৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।
মানিকতলায় ভোট লুটের অভিযোগ তুলে ফুলবাগান থানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে বিজেপি। পদ্মশিবিরের অভিযোগ, গত লোকসভা ভোটে ৩১ নম্বর পুরসভা এলাকায় ছ’হাজার ভোটের লিড ছিল বিজেপির। উপনির্বাচনে সেখানে ভোট লুট করেছে তৃণমূল। পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই অভিযোগ তুলে ফুলবাগান থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
বুধবার মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এসে তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে বচসায় জড়ান কল্যাণ। অভিযোগ, তাঁকে দেখে তৃণমূল সমর্থকেরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন।এমনকি, ‘চোর চোর’ স্লোগানও শুনতে হয় তাঁকে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
বুধবার দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাগদা। এ বার ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিনয়কুমার বিশ্বাসের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল। এমনকি, তাঁকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বিনয়ের কথায়, ‘‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই হামলা চালিয়েছে।’’
কমিশন সূত্রে খবর, দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজ্যে চার কেন্দ্রে ভোটদানের গড় হার ৩৮.২৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে ভোটদানের হার ৪২.১৯ শতাংশ। এ ছাড়াও রায়গঞ্জে ৪১.৩৮ শতাংশ, বাগদায় ৩৫.৬৬ শতাংশ এবং মানিকতলায় ৩৩.৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সকাল ১১টা পর্যন্ত বাংলার চার কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৪.২৫ শতাংশ। রায়গঞ্জে ভোট পড়েছে ২৫.৯৮ শতাংশ। এ ছাড়াও রানাঘাট দক্ষিণে ২৬.৩২ শতাংশ, বাগদায় ২২.৬৩ শতাংশ এবং মানিকতলায় ২১.৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসা জড়ালেন বাগদার ডিহিলদহের তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে আমাদের মারধর করাচ্ছে বিজেপি।’’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। বিজেপি প্রার্থীকে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
এ বার কলকাতার মানিকতলা কেন্দ্রে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগত তাণ্ডবের অভিযোগ তুলল সিপিএম এবং বিজেপির। মানিকতলা উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী রাজীব মজুমদার বলেন, ‘‘ভোটের নামে বেশ কিছু জায়গায় প্রহসন হচ্ছে। আমরা যা দেখতে পাচ্ছি ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় ভোটারদের তুলনায় বহিরাগতদের সংখ্যা বেশি। পুলিশ নীরব।’’ বিজেপির অভিযোগ, ১৬ এবং ৩১ ওয়ার্ডে বাইরে থেকে গুন্ডাবাহিনী এনে ভোট করাচ্ছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপি সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে এমন অভিযোগ করছে। উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৭৭ ভোটে ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ৬০০৬ ভোটে এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়।
রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য গৌতম বিশ্বাসকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত অবস্থায় রানাঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁকে। এই ঘটনায় জেলা নির্বাচনী আধিকারিক এবং পুলিশ সুপারের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সকাল ৯টা পর্যন্ত গড় ভোটদানের হার ১০.৮৫ শতাংশ। রাজ্যের চার কেন্দ্রের মধ্যে ভোটদানের হারে এগিয়ে রায়গঞ্জ। এই আসনে ভোট পড়েছে ১২.০১ শতাংশ। তার পরই রয়েছে রানাঘাট দক্ষিণ (১১.৫৮ শতাংশ)। বাগদায় ভোটদানের হার ১০.৬১ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে (৯.০১ শতাংশ)।
সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। ঘণ্টা ২ অতিক্রান্ত। মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছে ভোটগ্রহণ। তবে রানাঘাটের কয়েকটি জায়গায় অশান্তির ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে পায়রাডাঙ্গা এলাকায় বিজেপির এজেন্টদের বাড়িতে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই উত্তপ্ত এলাকা। এলাকার বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা বলেছে বলে খবর। বিজেপি এজেন্টের দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে। যদিও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভোটগ্রহণ শুরু হতেই ভোট দিলেন রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। রায়গঞ্জ করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪১ নম্বর বুথে ভোট দেন তিনি। ভোট দিয়ে বেরিয়ে কৃষ্ণ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছেন।
বুধবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ উত্তর দিনাজপুরে। রায়গঞ্জের কোথাও কোথাও সকালেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অনেকেই তাই সকাল সকাল ভোট দিতে এসেছেন রায়গঞ্জের বিভিন্ন বুথে। বৃষ্টি হওয়ার কারণে বুথে বুথে ভোটারদের উপস্থিতি অনেকটা কম। ভোট দিতে এসে কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। তারই মধ্যে ভোটারেরা ভোট দিতে আসছেন। কিন্তু সংখ্যাটা এখন অনেক কম রয়েছে। বর্ষাকালে গ্রামের কৃষকেরা চাষের কাজে ব্যস্ত। মনে হচ্ছে, বেলা বাড়লে ভোটারেরা ভোট দিতে আসবেন।’’
অন্য দিকে, রায়গঞ্জের শঙ্করপুর হাইমাদ্রাসায় ২১৪ নম্বর বুথে ভোট দেন বিজেপি প্রার্থী মানস ঘোষ।
লোকসভা ভোটের ফল বলছে রায়গঞ্জ, বাগদা এবং রানাঘাট— এই তিন কেন্দ্রেই এগিয়ে বিজেপি। মানিকতলায় এগিয়ে তৃণমূল।
লোকসভা ভোট মেটার পর এই প্রথম বিধানসভা উপনির্বাচন হচ্ছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে রানাঘাট, বাগদা, রায়গঞ্জ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। আর মানিকতলায় তৃণমূল। কিন্তু বাগদা কেন্দ্রে জয়ী বিশ্বজিৎ দাস এবং রায়গঞ্জ কেন্দ্রে জয়ী কৃষ্ণ কল্যাণী পরে তৃণমূলে যোগ দেন। পদ্মপ্রার্থী হিসাবে রানাঘাটে জয়ী হওয়া মুকুটমণি অধিকারী লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দেন। এই তিন জনকেই লোকসভায় প্রার্থী করে তৃণমূল। বিশ্বজিৎ বনগাঁ, কৃষ্ণ রায়গঞ্জ এবং মুকুটমণি রানাঘাট কেন্দ্রে জোড়াফুলের প্রার্থী হন। তিন জনেই পরাজিত হন।
সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও অনেক বুথেই এখনও ভোটগ্রহণ শুরু হয়নি। কোথাও কোথাও আবার মকপোল চলছে। বাগদা বিধানসভার হেলেঞ্চা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ১৩১ নম্বর বুথে চলছে মকপোল। এ ছাড়াও, চার বিধানসভার বিভিন্ন বুথের বাইরে ভোটারেরাও একে একে এসে জড়ো হচ্ছেন।
চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অশান্তি এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাঁট করেছে নির্বাচন কমিশন। পুলিশের পাশাপাশি, এই ভোটেও থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। চার কেন্দ্রের জন্য মোট ৭০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বরাদ্দ করেছে কমিশন। তার মধ্যে বাগদায় থাকবে সবচেয়ে বেশি বাহিনী। সেখানে ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। এ ছাড়াও রানাঘাট দক্ষিণে ১৯ কোম্পানি, রায়গঞ্জে ১৬ কোম্পানি এবং মানিকতলায় ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে কমিনশন।