বুথ জ্যাম করতে আসা দুষ্কৃতীদের দিকে তাড়া করে যাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। সোমবার করিমপুরের দোগাছিতে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমালের অভিযোগ উঠলেও দিনের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটল নদিয়ার করিমপুরে। আবার সবচেয়ে বেশি ভোটও পড়েছে সেখানেই।
সোমবারের ওই ভোটে কালিয়াগঞ্জ, খড়্গপুর সদরে তেমন বড় কোনও অশান্তি না হলেও করিমপুরে বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁকে ধাওয়া করে, লাথি মেরে ঝোপের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয় বলে বিজেপির অভিযোগ। তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা দাবি, বিজেপি নিজেই পরিকল্পিত ভাবে সহানুভূতি আদায়ের জন্য এ সব গোলমাল ঘটিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এ দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তিন কেন্দ্র মিলিয়ে ভোট পড়েছে ৭৫.৩৪%। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে করিমপুরে ৮১.২৩%। কালিয়াগঞ্জে ৭৭.১৭% এবং খড়্গপুরে ৬৭.৬২%।
করিমপুরে প্রায় ৯৫% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোটের তিন দিন আগে সেখানকার এক থানার ওসি-কেও সরানো হয়। তা সত্ত্বেও একটি বুথের কাছে বিজেপির প্রার্থীকে রাস্তায় ফেলে মারার ঘটনা কেন ঘটল, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে বিজেপি প্রার্থী ঝোপের মধ্যে পড়ে গিয়েছেন দেখে আধা সেনাকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা যায়। পরে কুইক রেসপন্স টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন তেহট্টের মহকুমাশাসক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। জয়প্রকাশের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভুল পথে চালিত করেছে।’’
ভোটারদের লাইন। করিমপুরের চরমোক্তারপুর। ছবি: প্রণব দেবনাথ
কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিতে ‘পরিকল্পিত’ ভাবে করিমপুরে জয়প্রকাশকে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। দলের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান মুকুল রায়ের কথায়, ‘‘গণতন্ত্রে তৃণমূলের আস্থা নেই। তিনটি কেন্দ্রেই পরাজয় নিশ্চিত বুঝে গুন্ডাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসনকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূল। আর করিমপুরে যা ঘটেছে, তা দেশের কোথাও ঘটে না। এ রাজ্যে বাম আমলেও এমন ঘটেনি।’’ এই ঘটনার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছে গেরুয়া শিবির।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সহানুভূতি পাওয়ার জন্য পরিকল্পনামাফিক বিজেপিই এ সব করেছে। এর পিছনে বিজেপির অন্তর্দলীয় কোন্দল আছে কি না, তা দেখা হোক।’’
খড়্গপুর বা কালিয়াগঞ্জে বিজেপি বুথ দখলের কিছু অভিযোগ তুলেছে ঠিকই। কিন্তু মোটের উপর ওই দুই কেন্দ্রের ভোট ছিল নির্বিঘ্নই। পুলিশের সঙ্গে খড়্গপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রেমচন্দ্র ঝা-এর বচসাকে কেন্দ্র করে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়। প্রেমচন্দ্রর অভিযোগ, খড়্গপুর টাউন থানার আইসি রাজা মুখোপাধ্যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বুথে বুথে ঘুরেছেন। তবে আইসির দাবি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতেই তিনি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। কোনও কেন্দ্রেই অবশ্য পুনর্নির্বাচন দাবি করেনি বিজেপি।
এ দিনের ভোট অবাধ হয়নি বলে অভিযোগ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র মনে করিয়ে দেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা আগেও এ রাজ্যে ঘটেছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এভাবেই পদদলিত করবার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য পুলিশ প্রশাসন যেমন নিস্ক্রিয় ছিলেন, তেমনই কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও সক্রিয় ভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রহরী রূপে আমরা দেখতে পেলাম না। দেখতে হবে মানুষের শক্তি না পেশি শক্তি, কে জয়লাভ করে।’’
বাম-কংগ্রেস জোট করে লড়েছে এ বার। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও একই সুরে বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত উপনির্বাচনও শান্তিতে হল না। মানুষের রুটি-রুজি, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় আমরা জোট বেঁধে লড়েছি। এলাকা বিশেষে তৃণমূল এবং বিজেপি দখলদারি চালিয়েছে। তবু তার মধ্যেও অনেক মানুষ নিজেদের ভোট দিয়েছেন।’’