বাড়ির গ্যারাজে পড়ে রয়েছে রামরতনবাবুর (ইনসেটে স্ত্রীর সঙ্গে) দেহ। ইংরেজবাজারে। — নিজস্ব চিত্র
প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী রামরতন অগ্রবাল (৫৮), তাঁর স্ত্রী মঞ্জুদেবী (৫০) ও পরিচারক গণেশ রামকে (৫০) কুপিয়ে খুন করা হয়েছে মালদহের ইংরেজবাজারে। দুষ্কৃতীরা বৃহস্পতিবার রাতে রামরতনবাবুর বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্ত্রী ও পরিচারককে খুন করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, তখন রামরতনবাবু বাড়িতে ছিলেন না। ফেরার পরে তাঁকে গ্যারাজে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে।
বেশ কিছু সোনার গয়না খোয়া গিয়েছে বলে এই পরিবারের সন্দেহ। তবে মঞ্জুদেবীর হাতে কানে গলায় থাকা কয়েক লক্ষ টাকার অলঙ্কার আততায়ীরা নেয়নি। ঘরে থাকা একটি ছোট ভল্টও খোলা হয়নি। তাই পুলিশের ধারণা, সম্ভবত ডাকাতির জন্য খুন করা হয়নি। ব্যবসা কিংবা জমি সংক্রান্ত গোলমালের জেরেই এই কাণ্ড ঘটেছে। পুলিশের নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই কিছু গয়না নিয়ে যেতে পারে দুষ্কৃতীরা। একাধিক দুষ্কৃতীই রামরতনবাবুর বাড়িতে ওই রাতে হানা দিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
মালদহ শহরের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা রামরতনবাবুর তিন মেয়ের দু’জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক মেয়ে কলকাতায় পড়াশোনা করেন। শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দপল্লির বাড়িতে রামরতনবাবু স্ত্রী ও গণেশবাবুকে নিয়েই থাকতেন। পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরে তাঁর একটি ইটভাটা রয়েছে। রেলের ঠিকাদারিও করতেন। জমি কেনাবেচার ব্যবসাও ছিল। রামরতনবাবুরা তিন ভাই। তিনিই বড়। তাঁর বাড়ির পাশেই থাকেন অপর দুই ভাই রামকৃষ্ণ ও রামলক্ষ্মণ। তাঁরাও জমির ব্যবসা করেন।
এ দিন সকালে রামরতনবাবুর ইটভাটার শ্রমিক রঘু সাহা তাঁর বাড়িতে রোজকার মতো ফুল আর দুধ দিতে এসেছিলেন। তিনিই গ্যারাজের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রামরতনবাবুকে পড়ে থাকতে দেখেন। পাশেই গাড়ির নীচে পড়েছিল গণেশবাবুর দেহ। মঞ্জুদেবীর দেহ মেলে দোতলায় সিঁড়ির ঘর থেকে। তাঁদের শোয়ার ঘরের টেবিলে রামরতনবাবুর রাতের খাবার ঢাকা দেওয়া ছিল। পুলিশের ধারণা, রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে তিন জনকে খুন করা হয়। আততায়ীরা এই পরিবারের পরিচিত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বেলা বাড়তে খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা সকাল সাড়ে ন’টা থেকে এক ঘণ্টা ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এ দিন দুপুর থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত জেলা সদরে ৪৮ ঘন্টা ব্যবসা বন্ধের ডাকও দেওয়া হয়েছে। তবে দুপুর থেকেই শহরে দোকান বন্ধ হতে শুরু করে।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, দ্রুত ঘটনার কিনারা করা যাবে। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে।’’ ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘পরিকল্পিত ভাবেই খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ রামরতনবাবুর বাড়ির সামনে ব্যবসায়ী প্রণব সিংহের বাড়ি। প্রণববাবুর বাড়ির সামনে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। সেই ফুটেজও পুলিশ সংগ্রহ করেছে।