প্রহরা: এই ফটক পেরিয়েই যেতে হয় ফুলবাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
এ এক অন্য বন্দিজীবন।
সংশোধনাগার নয়, সীমান্তের কাঁটাতারে!
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে আগের সব বছরের মতোই যন্ত্রণায় হাসিবুল, সরিফুল, কাইমুলেরা।
উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর থানার বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে ফুলবাড়ি। প্রজাতন্ত্র দিবসের মুখে সেই গ্রামেই শ’খানেক পরিবারের একটাই আর্তি— ‘‘কাঁটাতারের বেড়া থেকে মুক্তি।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দিন ধরে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের কড়াকড়ি বেড়েছে। সন্ধ্যার আগেই সীমান্তের গ্রামগুলিতে সুনসান হয়ে যাচ্ছে। অজানা আশঙ্কায় ছায়া ফুলবাড়িতেও।
গ্রামবাসীদের আক্ষেপ, ১৫ অগস্ট বা ২৬ জানুয়ারির উচ্ছ্বাস থেকে তাঁরা থাকেন ‘শত যোজন’ দূরে। অনেকের অভিযোগ, স্বাধীনতার পূর্ণ আস্বাদও মেলে না সেখানে। কারণ ফুলবাড়িতে এখনও পৌছয়নি সর্বশিক্ষার আলো, পঞ্চায়েত প্রকল্পের সব সুবিধা। সেখানে মেলে না পোলিও বিরোধী অভিযানের মতো স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুযোগও।
এলাকাবাসী জানান, দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের মাধ্যম বলতে সীমান্তের ৪২ নম্বর গেট। তা-ও ফুলবাড়ি থেকে সেখানে যেতে হলে সঙ্গে থাকতে হয় পরিচয়পত্র। তা দেখাতে হয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে।
গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামতেই গোটা এলাকায় যে জারি হয় অঘোষিত কার্ফু। প্রতি দিন। ঘড়ির কাটা ধরে সীমান্তের গেট। তা ঘিরেই চলে ফলবাড়ির রোজনামচা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, উত্তর দিনাজপুরের ২২৭ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সময় ওপারে থেকে যায় ভারতের কয়েকটি গ্রাম, কৃষিজমি, চা বাগান। সেই সময় কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের এপারে নিয়ে আসা হলেও গোয়ালপোখরের ওই গ্রাম বেড়ার ওপারেই থেকে গিয়েছে।
ফুলবাড়ির বাসিন্দা রইসুল আলম বলেন, ‘‘বেড়ার ওপারে আমাদের জমি নেই। প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে সেখানে আমাদের ঘর দেওয়া হবে। কিন্ত জমি কে দেবে? এই গ্রামেও আরও অনেকে ছিলেন। যাঁদের জমি ওপারে ছিল, তাঁরা চলে গিয়েছেন। আমার মতো অসহায় কয়েক জন শুধু থেকে গিয়েছেন।’’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘এক দিকে দুষ্কৃতীদের ভয়, অন্য দিকে বিএসএফ জওয়ানেরা গ্রামে মাঝেমধ্যে সন্দেহের বশে তল্লাশি চালান। হয়রানির ভয়ে থাকে সারাক্ষণ। অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে হয়। এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি চাই। ফিরতে চাই বেড়ার ওপারে।’’ গ্রামবাসী নইমুল হকের মন্তব্য, ‘‘আমাদের কথা কেউ ভাবে না। ১৫ অগস্ট হোক বা ২৬ জানুয়ারি— আমাদের কাছে পৌঁছয় না উৎসবের আমেজ।’’
গোয়ালপোখর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মুস্তারি বেগম বলেন, ‘‘ওই গ্রামের সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’
বিএসএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু কড়াকড়ি থাকলেও গ্রামবাসীদের হয়রানি করা হয় না। বিপদে বিএসএফ জওয়ানেরাই ওই গ্রামের পাশে থাকেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গ্রামটি কার্টাতারের এপারে নিয়ে আসতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’