মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের সমীন্তবর্তী জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে গিয়ে বিএসএফকে (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা সীমান্তরক্ষী বাহিনী) আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহারের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিশানা করেছিলেন বিএসএফকে। তার পরেই বিবৃতি জারি করে মমতার আক্রমণের জবাব দিয়েছে ওই বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় অভিযোগ তারা ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিএসএফ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীন। যে মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলার নিশীথ প্রামাণিক। ঘটনাচক্রে, মমতা সোমবার সভা করেছেন নিশীথেরই জেলা কোচবিহারে। কোচবিহারের সভা থেকে নিশীথকে ‘গুণ্ডা’ বলেও আক্রমণ করেছিলেন তিনি। অবশ্য তার পাল্টা কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি কোচবিহারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
তবে সোমবারের পর মঙ্গলবারও মমতা দেশের বিএসএফকে আক্রমণ করেন। মঙ্গলবার তাঁর সভা ছিল জলপাইগুড়ির মালবাজারে। সোমবার কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রীর সভার পরের দিনই ওই জেলার দিনহাটায় গুলি চলে। দিনহাটার গীতালদহে তৃণমূল-বিজেপি গুলি লড়াইয়ে বাবু হক নামে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয় বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। গুলিতে জখম হয়েছেন আরও পাঁচজন তৃণমূল কর্মী। আহতদের দিনহাটা মহকুমা হাসপাতাল এবং এমজেএন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিএসএফের বিবৃতি। — নিজস্ব চিত্র।
সেই ঘটনার রেশ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার তাঁর জনসভায় বলেন, ‘‘শুনলাম, কোচবিহারে একজনকে গুলি করে মারা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এসে মেরে গিয়েছে বলেই জানতে পেরেছে (পুলিশ)। এই ঘটনা ছাড়াও বিএসএফের গুলিতে কোচবিহারে অনেকে মারা গিয়েছেন।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘বিএসএফকে বলব নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে। মোদী আজ আছেন কাল নেই। আপনাদের তো দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে হবে। আজকেও সীমান্তে গুলিতে একজন মারা গিয়েছেন। তার জন্য অ্যাকশন নেওয়া হবে। যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁর পরিবারের একজন হোমগার্ডের চাকরি পাবেন।’’ তবে পাশাপাশিই মমতা এ-ও বলেছেন, ‘‘সব বিএসএফ খারাপ নয়।’’
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। ১৫ কিলোমিটারের বদলে ৫০ কিলোমিটার সীমানা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেই সময়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মমতা। তার পরেও নানা সময়ে বিএসএফের সমালোচনায় সুর চড়িয়েছিলেন তিনি। এমনকি, বাংলার সীমান্তের গরুপাচারের ঘটনাতেও বিএসএফের যুক্ত থাকার অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূলের একাধিক নেতা।
মমতা প্রচারে বলেছিলেন, ‘‘আমি নিশ্চয়ই প্রশাসনকে বলব নজর রাখতে। ১৫ কিলোমিটার যেটা ছিল, সেটা গায়ের জোরে একতরফাভাবে ৫০ কিলোমিটার করেছে।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে, নির্বাচনের সময় বর্ডারে-বর্ডারে গিয়ে আপনাদের তারা ভয় দেখাবে। বলবে, তুলে নেব! সিবিআই লাগাব। ইডি লাগাব। আমি বলি, কিছু করতে পারবে না। আইনত আইনশৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের আওতায় পড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় পড়ে না।’’ ভোটের সময় বিএসএফ কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে ‘প্রভাব’ খাটাতে পারে বলেও মমতা অভিযোগ করেছিলেন।
জবাবে বিএসএফ জানায়, যে কোনও নির্বাচনে কাজ করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশমতোই তারা কাজ করে থাকে। তাদের দায়িত্ব সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশ, চোরাকারবার ও অপরাধমূলক ঘটনা রোধ করে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী যে সব অভিযোগ করেছেন, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তাদের আরও সংযোজন, বিএসএফ তাদের দায়িত্ব প্রসঙ্গে সচেতন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এক সাংবাদিক বৈঠকে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের বিরুদ্ধে গরিব মানুষের ওপর অত্যাচার চালানোরও অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।