সোনা পাচারে গ্রেফতার করিমপুরের যুবক বিট্টু মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে মা-দাদা দু’জনেই অসুস্থ। দু’পা-ই অকেজো হয়ে গিয়েছে দাদার। কাজ করতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল বিট্টুকে। মিষ্টভাষী, নম্র-ভদ্র স্বভাবের বিট্টু পাড়ার সকলের কাছে অত্যন্ত স্নেহের। তাঁকেই সোনা পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ধরে করে নিয়ে গেল বিএসএফ!
নদিয়ার করিমপুর থানা এলাকার রামনগরের এই ঘটনায় স্তম্ভিত পড়শিরা। তাঁদের হতচকিত হওয়ার আরও বড় কারণ, বিট্টুর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকার কাঁচা সোনা। এ ছাড়াও বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এলাকার শিক্ষক ওসমান গনি মণ্ডল বলেন, ‘‘এত দিন ধরে ওকে দেখছি। টেরই পাইনি যে, ছেলেটা এত বড় পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত!’’ স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবু সর্দারের কথায়, ‘‘একটু গোবেচারা স্বভাবের ছিল ও। তবে ওর আচরণে তো কোনও দিন অস্বাভাবিকতা দেখিনি। তবে প্রায় দিনই রাত করে বাড়ি ফিরত আর ভোরবেলা বেরিয়ে যেত। তাই বলে ও যে এত বড় চক্রের একটা অংশ, ভেবেই ভয় লাগছে!’’
বিএসএফ সূত্রে খবর, গোপন সূত্র মারফত খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নদিয়ার একাধিক এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায় বিএসএফ ও ডিআরআই (ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স)। কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কের সীমানগর এলাকার চার জায়গায় তাদের অভিযানে উদ্ধার হয় ১৬টি সোনার ইট। ওজন প্রায় সাড়ে নয় কেজি। তার বাজারদর অন্তত সাত কোটি টাকা। এ ছাড়াও সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাচারের কাজে ব্যবহৃত চারটি গাড়িও ডিআরআই বাজেয়াপ্ত করেছে। ডিআরআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ সোনা উদ্ধার হয়েছিল। গ্রেফতারও করা হয়েছিল তিন জনকে। তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ করিমপুর এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলে। রামনগর থেকে গ্রেফতার হন বিট্টু মণ্ডল ও শাহীন মণ্ডল।
দক্ষিণবঙ্গে বিএসএফের জনসংযোগ আধিকারিক একে আর্য বলেন, ‘‘বিএসএফ ও ডিআরআইয়ের যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার আটকানো গিয়েছে। সোনা পাচার সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন করছি।’’