স্বামীর সঙ্গে গোলমাল। স্ত্রী তাই শিশুপুত্রকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন বছরখানেক আগে। তার পরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
কিন্তু দাদু কিছুতেই নাতিকে জামাইয়ের হাতে দিতে রাজি হননি। নিজেও অসুস্থ ছিলেন। তাই বছর দুই আগে নাতিকে তুলে দেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে।
দাদু মারা যেতে শিশুটির বাবা তাকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে আবেদন করেন কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে। কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতি এবং উত্তর ২৪ পরগনা শিশুকল্যাণ সমিতি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় শিশুটিকে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। কিন্তু বেঁকে বসে ওই সংস্থা। শেষমেশ পুলিশ পাঠিয়ে শিশুটিকে তুলে এনে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় নতুন করে টানাপড়েন।
সমিতির নির্দেশে অখুশি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শিশুটিকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয় তারা। কিন্তু জেলাশাসক তাদের আর্জি খারিজ করে দেন। শেষে শিশুটির কাছে পৌঁছতে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের অধিকর্তার অফিস থেকে চিঠি জোগাড় করে তারা। শিশুটিকে দেখার অনুমতি মেলে।
প্রশ্ন উঠেছে, যে সংস্থা শিশুকল্যাণ সমিতির নির্দেশ অগ্রাহ্য করায় শিশুটিকে উদ্ধার করতে পুলিশ পাঠাতে হয়েছিল, তারা কী ভাবে শিশুটির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেল? অধিকর্তা রিচা মিশ্র জানান, এ ধরনের একটি আবেদন এসেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, শিশুটিকে দাদু দেখতে পাচ্ছেন না। বিষয়টি ভুল বুঝেই হয়তো দফতর এমন চিঠি পাঠিয়েছে!
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার গোপীনাথপুরের বাসিন্দা শঙ্কর রায় সম্প্রতি নিজের ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আবেদন জানান। ওই আবেদনে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে স্ত্রীর সামাজিক ও মানসিক পার্থক্যের জন্য বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই গোলমাল শুরু হয়। শিশুর জন্মের আগেই স্ত্রী বাপের বাড়ি ফিরে যান। বধূ নির্যাতন ও বিচ্ছেদের মামলাও হয়।
কিন্তু তারই মাঝে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্ত্রী। শ্বশুরমশাই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে রেখে আসেন বছর পাঁচেকের নাতিকে। ২০১৬ সালে দাদু মারা যান।
বাবার আবেদনে শিশুটিকে যাদবপুর থানার কালিকাপুরের এক আশ্রম থেকে উদ্ধার করে বাবা শঙ্কর রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সমিতির নির্দেশ মানতে নারাজ ‘নব জনকল্যাণ সমিতি’ নামে ওই সংস্থা। সংস্থার সম্পাদক শিবপ্রসাদ ভদ্রের কথায়, ‘‘ওর দাদু লিখিত ভাবে আমাদের হাতে শিশুটির দায়িত্ব দেন। আমাদের কাছ থেকে কী করে সমিতি ওকে বাবার হাতে দিল? ওর বাবা মাকে অত্যাচার করতেন। ছেলের দায়িত্ব নেননি। এখন হঠাৎ কেন দায়িত্ব নিতে চাইছেন, তা না জেনেই শিশুটিকে তাঁর হাতে দেওয়া হল!’’
অভিযোগ উড়িয়ে শঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে কিছু সমস্যা ছিল ঠিকই, তবে ওঁর উপরে কখনও অত্যাচার করিনি। ওঁর মৃত্যুর পরে ছেলে দাদুর কাছে মানুষ হচ্ছে বলে জানতাম। পরে শুনি, ও রয়েছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। আমি বাবা হিসেবে এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই ছেলেকে আইন মোতাবেক ফিরে পেতে চেয়েছি।’’
কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিশুকল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী কোনও শিশুকে রাখতে গেলে লাইসেন্স দরকার। কিন্তু ওই সংস্থার কোনও লাইসেন্স নেই।