মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যে তিরে তৃণমূল বিদ্ধ, তাকেই এ বার বিজেপির বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাটমানির জবাবে এ বার তাঁর লক্ষ্য বিজেপির ‘ব্ল্যাকমানি’।
রবিবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তিনি দাবি করেন, ‘‘ব্লকে ব্লকে বুথে বুথে বিজেপির কাছ থেকে কালো টাকা ফেরত চাইতে হবে। ভোটে বিজেপির নেতারা কে কত টাকা নিয়েছেন, সব ফিরিয়ে দাও। এটাই হবে আমাদের আন্দোলন।’’ সে জন্যই আগামী ২৬ ও ২৭ জুলাই রাজ্যজুড়ে দলের কর্মীদের বিজেপির ব্ল্যাকমানি, কাটমানি ফেরতের দাবিতে পথে নামার নির্দেশ দিলেন দলনেত্রী মমতা। বিজেপি নোটবন্দির পরে বাংলায় কত ফ্ল্যাট কিনেছে, লোকসভা ভোটে কী ভাবে টাকা এসেছে এবং কত টাকা খরচ হয়েছে, সে হিসেবও দিতে হবে বলে দাবি তুললেন তৃণমূল নেত্রী।
গত মাসে নজরুল মঞ্চে দলীয় সভায় তৃণমূলের কর্মীদের তোলাবাজির টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। তার পরেই দিকে দিকে তৃণমূল নেতাদের কাছে কাটমানির টাকা ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ, গোলমাল শুরু হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পরে তৃণমূলের তরফে এমনকী মুখ্যমন্ত্রীও বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। বিজেপি চক্রান্ত করে এ সব গোলমাল করছে।
সেই যুক্তির রেশ টেনেই এ দিন মমতা বলেন, ‘‘সবুজশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো সরকারের ছোট্ট ছোট্ট কাজে কেউ যাতে ভাগ বসাতে না পারে, সে দিকে নজর রাখতে বলেছিলাম। একটা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কথাটা বলেছিলাম। কিন্তু বিজেপির ডাকাতগুলো বলছে কাটমানির টাকা ফিরিয়ে দাও।’’ তবে কাটমানি-অস্বস্তি যে এখনও কাটেনি, তা বুঝিয়ে মমতা কর্মীদের বলেন, ‘‘মানুষের কাজ ভালভাবে করতে হবে। সরকারি কাজে ভাগ বসানো যাবে না।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার অভিযোগ, ‘‘তোমাদের দিল্লির পার্টি অফিস তো টেন-স্টার হোটেল। হাজার হাজার, কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে এল? বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে প্রত্যেক ভারতীয়কে ১৫ লক্ষ টাকা করে ফেরত দেবে বলেছিল ওরা। কোথায় সেই টাকা? ফেরত দাও সেই টাকা।’’ বিদেশি অনুদানের যে টাকা বিজেপি নিয়েছে, তারও তদন্ত কেন হবে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, ‘‘বিদেশি অনুদানের টাকা কত নিয়েছ, তা নিয়ে মামলা যাতে না হয়, সে জন্য কেন্দ্র আইন করল। অন্যের বিরুদ্ধে মামলা যদি হয়, তা হলে বিজেপির বিরুদ্ধে হবে না কেন? অন্যদের ধরবে আর তোমার নিজের সাতখুন মাফ?’’
কেন্দ্রীয় উজ্জ্বলা প্রকল্প এবং এলপিজি কেলেঙ্কারির নথি প্রকাশ্যে আনারও হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি কাটমানি নিয়েছে। গ্রামে গ্রামে উজ্জ্বলার কাটমানি নিয়েছ, তার হিসাব দাও। এলপিজির দোকান, পেট্রোল পাম্প থেকে কত টাকা নিয়েছ, হিসেব দাও। আমি চাই, উজ্জ্বলা কাণ্ডের তদন্ত হোক।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ অবশ্য মমতার এই সব অভিযোগ নস্যাৎ করে পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কালোটাকা নেই। তাই ফেরত দেওয়ার প্রশ্নও নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওঁর হাতেই সরকার। আইন। তদন্ত করে প্রমাণ করুন না। কেউ অন্যায় করে থাকলে শাস্তি পাবে।’’
কাটমানি-বিতর্কে অশান্তি বাড়তে থাকায় এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর জন্য রাজ্য সরকার গ্রিভান্স সেল খুলেছিল। বিক্ষোভ পরিস্থিতিতে কোনও ভাবে আইন হাতে তুলে না নিয়ে সরাসরি পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিতে আগেই মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনও সেই অনুরোধের পাশাপাশি তাঁর আশ্বাস, ‘‘দল হোক বা সরকার— কেউ কিছু করে থাকলে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। পুলিশকে জানাবেন।’’
বিজেপিকে কালোটাকা অস্ত্রে আঘাতের চেষ্টার পাশাপাশি বামেদেরও আক্রমণ করে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘৩৪ বছর সিপিএমের দখলে পঞ্চায়েত, পুরসভা ছিল, বিধায়ক-সাংসদ ছিল, কত টাকা ফিরিয়েছে?’’ যার প্রেক্ষিতে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের ৩৪ বছরে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন কখনও তো উনি কাটমানি নেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগটাও করতে পারেননি। ক্ষমতায় আসার আট বছর পরে এখন ওঁর মনে হচ্ছে সিপিএম কাটমানি নিয়েছিল! আসলে ওঁর নিজের দলের অস্বস্তি আড়াল করতেই এই সব বলতে হচ্ছে এখন। আমরা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, কমিশন তৈরি করে কারা কাটমানি নিয়েছে, ধরুন।’’