Jadavpur University Student Death

ব্রাত্যদের দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন ছাত্রের মা

মায়ের অবস্থা দেখে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে নিয়ে আসা হয় মৃত ছাত্রের বাবাকেও। তিনি আবার অনেক ক্ষণ ধরে প্রায় একটানা কথা বলে যাচ্ছেন। ছেলের কথা বলে-বলে বিলাপই করে যাচ্ছেন প্রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫১
Share:

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

ঘরের ভিতরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সামনে এসেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা। নেতা-মন্ত্রীদের পা ধরে অনুরোধ করার জন্য প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলেন। অনেক কষ্ট করে তাঁকে ঠেকিয়ে রাখা হল। তার মধ্যেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন, ‘‘আমার ছেলে কোথায়? তোমরা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও না গো! আমি ওকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছি!”

Advertisement

যাদবপুরে মৃত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বুধবার দুপুরে নদিয়ার ওই বাড়িতে যান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, অর্থ দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।

মায়ের অবস্থা দেখে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে নিয়ে আসা হয় মৃত ছাত্রের বাবাকেও। তিনি আবার অনেক ক্ষণ ধরে প্রায় একটানা কথা বলে যাচ্ছেন। ছেলের কথা বলে-বলে বিলাপই করে যাচ্ছেন প্রায়। তাঁকে দেখেই মা কাতর গলায় বলে ওঠেন, “ওর বাবার মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, মানুষটাকে একটু ডাক্তার দেখাও না গো!” বার বার বলতে থাকেন, “তোমরা এমন কিছু করো, যাতে আমার মতো আর কারও কোল খালি না হয়।” ব্রাত্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেখছেন। কেউ ছাড় পাবে না।’’ এর পরে বাকি সকলকে ঘর থেকে বার করে দিয়ে তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা ছাত্রটির বাবা-মা, মামা-মামিদের সঙ্গে কথা বলেন।

Advertisement

পরে বেরিয়ে এসে এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্যপালকে নিশানা করেন ব্রাত্য। আর শশী বলেন, ‘‘মাথা থেকে পা পর্যন্ত যারা আছে, তাদের সবাইকেই ধরা হবে। ছাত্রদের এই মানসিকতা কেন হবে? হস্টেলের এই পরিবেশ কেন হবে?’’ তাঁরা ফিরে যাওয়ার পরে ছাত্রের বাবা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, অপরাধীরা শাস্তি পাবে। আমরা তাঁর উপরে ভরসা করে আছি।’’

ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার জেরে রাজনৈতিক চাপান-উতোর অবশ্য থেমে নেই। যাদবপুরের ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে একটি অরাজনৈতিক সংস্থা আয়োজিত আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে এ দিনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ঠিকমতো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বিধানসভা তাঁরা অচল করে দেবেন। কয়েক দিন মুলতুবি থাকার পরে বিধানসভার বাদল অধিবেশনের পরবর্তী পর্যায় শুরু হওয়ার কথা আগামী ২২ অগস্ট। কলকাতার আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহের অনুষ্ঠানে শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, ‘‘ওই দিনটিকে মৃত ছাত্রের নামে রাখছি। ওই দিনে বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কেরা কোমর বেঁধে তৈরি হচ্ছি। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এই ঘটনা নিয়ে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চাইব। যদি দিতে না পারেন, বিধানসভা চলতে দেব না। অচল করে দেব!’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, এর মধ্যেই তিনি অন্তত ১৫-২০ জন বিজেপি বিধায়ক নিয়ে নদিয়ায় মৃত ছাত্রের বাড়িতে যাবেন।

বিধানসভায় সরকার পক্ষের উপমুখ্য সচেতক তাপস রায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ধারণা নেই বলে উনি এ কথা বলছেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে এক দিনও নিজের ভূমিকা পালন করেননি। বিধানসভা পরিচালনার দায়িত্ব যাঁদের উপরে রয়েছে, তাঁরা জানেন, কী ভাবে তা চালাতে হয়। আশা করছি, বিরোধী দলনেতা হিসেবে উনি নিজের কর্তব্য পালন করবেন। তাঁর উত্তেজনা ছড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই!’’

ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে এবং বামেদের বিরুদ্ধে যে ‘অপপ্রচার’ চলছে, তার প্রতিবাদে বিদ্বজ্জনেদের সামনে রেখে নাগরিক মিছিলের পরিকল্পনা হয়েছে সিপিএমের তরফেও। ঠিক হয়েছে, সুকান্ত সেতু থেকে কাল, শুত্রুবার মিছিল করে যাদবপুর থানার কাছে প্রতিবাদ-সভা হবে। পতাকা ছাড়া মিছিলের সামনে থাকার কথা বিদ্বজ্জন ও বিশিষ্টদের, সঙ্গে শামিল হবেন সিপিএম-সহ বাম নেতৃত্বও। তার আগে আজ, বৃহস্পতিবার ছাত্র-মৃত্যুর বিচার এবং র‌্যাগিং-মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার দাবিতে ঢাকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে যাদবপুর পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে চার ছাত্র সংগঠন এসএফআই, এআইএসএফ, পিএসইউ এবং ছাত্র ব্লক।

(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement