শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
আইনি জটে স্কুলের নিয়োগ আটকে থাকলেও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আশা, এই জট লোকসভা ভোটের আগেই কেটে যাবে। আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা ভোট হতে পারে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। সেই জল্পনা সত্যি হলে ভোট ঘোষণা হতেই পারে মার্চে। তবে কি জানুয়ারির মধ্যেই চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। ব্রাত্যকে সে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, ‘‘লোকসভার ভোটের দিন ঘোষণা কবে, তা তো জানি না। তবে আশা করছি তার আগেই সমাধান হয়ে যাবে।’’
সমাধান দূরে নয়, মত ব্রাত্যের
কলকাতার মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে গত প্রায় তিন বছর ধরে ধর্নায় বসে রয়েছেন স্কুলের চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার তাঁদেরই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিকাশ ভবনে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে কথা বলার জন্য তাঁদের অনুরোধে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। অন্য দিকে সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি এবং এসএসসির চেয়ারম্যান। বিকাশ ভবনে ওই বৈঠকের পর চাকরিপ্রার্থীরা বেরিয়ে এসে বলেছিলেন, তাঁরা খুশি। কারণ তাঁরা জেনেছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হোক। পরে বিকাশ ভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যও। তিনি বলেন, ‘‘আমি বরাবরই বলে এসেছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এক মাত্র চাকরি দিতে পারেন। তিনিই চাকরি দেবেন। আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। সেই জটিলতা কাটলেই চাকরি হবে।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জটিলতা কাটার আগেই যদি লোকসভা ভোট ঘোষণা হয়ে যায়, তবে তো আবার সব কিছু আটকে যাবে। এরই জবাবে ব্রাত্য ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তিনি আশাবাদী যে, তার আগেই সমস্যা মিটবে।
‘মমতা-অভিষেকও পক্ষে’
সোমবার বিকাশ ভবনের বৈঠক শেষে দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানেই চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। ব্রাত্য বলেন, ‘‘আশা বরাবরই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই এঁদের সঙ্গে ছিলেন। এমনকি, দলীয় বৈঠকে শাসকদল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও বার বার চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন। কিন্তু বাধা পড়ছে আইনে। নানা রকম আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ।’’
গাছতলায় একটিই বৈঠক
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এই নিয়ে সপ্তম দফার বৈঠক হচ্ছে তাঁদের। আবার তাঁরা বৈঠকে বসবেন। ব্রাত্যের কথায়, ‘‘আগেও ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। শনিবার গাছের তলায় বৈঠক হয়েছে, তাই সবাই জানতে পেরেছেন। অন্য বৈঠকগুলো চার দেওয়ালের মধ্যে থাকায় প্রকাশ্যে আসেনি। আজকের বৈঠকের পর আগামী ২২ তারিখ আবার এই চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হবে।’’
তারিখ বলা হোক: চাকরিপ্রার্থী
চাকরিপ্রার্থীরা সোমবারের বৈঠক শেষে বলেছিলেন, ‘‘আজকের বৈঠকে বুঝতে পারলাম, বিভিন্ন দফতরগুলির মধ্যে যোগাযোগের সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু আর সেই সমস্যা নেই। মুখ্যমন্ত্রী আইনি জট কাটিয়ে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এখন জানতে চাই তার ফল কবে পাব? আমরা সেই তারিখ জানতে চাই। আলোচনায় বলা হয়েছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে কত দূর অগ্রগতি হয়েছে, তার রিপোর্ট দেওয়া হবে। আপাতত ২২ ডিসেম্বর সেই রিপোর্ট পেশের দিন ঠিক হয়েছে। ওই দিন মিটিংয়েই আমরা এ বিষয়ে জানতে পারবে বলে আশা করছি। ’’
সব আদালতের হাতে: শিক্ষামন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের একটি তারিখ পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। তিনি বলেছেন, আগামী ১৪ তারিখ এ সংক্রান্ত মামলা ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্ট। আশা করি আমরা দ্রুত সেই তারিখ পাব। আদালতই এ বিষয়ে রায় দেবে। আমার জট কাটানোর চেষ্টা করছি। তবে আশা করছি দ্রুত এই আইনি জট কাটবে। আদালতের নির্দেশের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে আদালত যা বলবে, তার পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ দিতে শুরু করব।’’
৫৫৭৮ জনকে নিয়োগের দাবি
নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে মোট ৫৫৭৮ জনকে নিয়োগের দাবি তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এর মধ্যে নবম-দশমে ৩০১০টি এবং একাদশ-দ্বাদশে ২৫৭৮টি চাকরির দাবি করেছিলেন এই চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার বিকাশ ভবনে বৈঠকের পর বাইরে এসে তাঁরা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সমস্ত আইনি জটিলতা কাটিয়ে যেন চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। মোট ৫৫৭৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।’’ যদিও ব্রাত্য সাংবাদিক বৈঠকে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ নিয়ে মমতার তৎপরতার কথা জানালেও ৫৫৭৮ আসনে নিয়োগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। এমনকি, চাকরিপ্রার্থীদের জন্য যে অতিরিক্ত ২১৭৯টি শূন্যপদ তৈরি করেছিলেন মমতা সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ব্রাত্য বলেন, ‘‘আগে আদালত থেকে নিয়োগের ছাড়পত্র আসুক, তার পর এ নিয়ে ভাবা যাবে।’’ তবে একই সঙ্গে ব্রাত্য এ-ও বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক দু’জনেই চান এই চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পাক। আদালতের জটিলতা কাটলেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিয়োগ দেওয়া শুরু হবে।
আমরা খুশি: রাসমণি
ধর্নামঞ্চে মাথা কামিয়ে চাকরি না পাওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থী রাসমণি পাত্র। সেই রাসমণি বৈঠক থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘‘কোথায় জট, তা জানতে এসেছিলাম। আমাদের বলা হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ দিয়ে বাড়ি পাঠানো হবে। কবে নিয়োগ সেটা ২২ তারিখ জানতে পারব। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে আশা করি আমরা দ্রুত স্কুলে ফিরতে পারব। জীবনটা বাঁচবে। আমরা খুবই খুশি হয়েছি আজকে।’’