ফাইল চিত্র।
সদ্য সুপ্রিম কোর্ট তেলঙ্গানার রাজ্যপালকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর কাছে রাজ্য বিধানসভা কোনও বিল পাঠালে তা তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেলে রাখতে পারেন না। তাঁকে দ্রুত সেই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুরুলিয়ায় মঙ্গলবার সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই প্রসঙ্গটি তুলেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে বার্তা দিলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করা নিয়ে যে বিলটি বিধানসভায় পাশ হয়ে তাঁর কাছে গিয়েছে, সেটি নিয়ে এ বার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।
রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে ব্রাত্য এর পরে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে আমরা কোনও নিয়ন্ত্রণ চাই না। কিন্তু বাইরের কোনও ভবন, সদন বা বাইরের কোনও পাল যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চান, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’’
সিদো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শনের পরে ব্রাত্য এ দিন বলেন, ‘‘আদালত বলেছে, একটা বিল যখন বিধানসভায় পাশ হচ্ছে, সেটা সই করতে তো রাজ্যপালের কাছে যায়। রাজ্যপাল এটা অনন্ত কাল ফেলে রাখতে পারেন না। বড় জোর দু’সপ্তাহ পারেন।’’ এর পরে তিনি বলেন, ‘‘তা হলে আমরা গত বছর জুন মাসে বিধানসভায় যে বিলটি পাশ করেছিলাম যে আচার্য হোন মুখ্যমন্ত্রী, তার এক বছর হতে চলল। রাজ্যপালকে আমরা বলেছি, হয় ওই বিল আপনি দয়া করে সই করুন, অথবা অনুগ্রহ করে বিল আমাদের কাছে ফেরত পাঠান।’’
রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিনই এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে সরকার, আইনসভা ও রাজ্যপালের ভূমিকা সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা আছে। সুপ্রিম কোর্ট তাতেই সিলমোহর দিয়েছে। আমরা সকলেই সংবিধানে দেওয়া সেই দায়িত্বই পালন করব, এটাই প্রত্যাশিত।’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী খুব ভাল করে জানেন, এই বিল কোনও দিন পাশ হবে না। তার আগে এই সরকার বাইপাস হয়ে যাবে! তৃণমূলের এই অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বিষয়ে দেশের মানুষ অবহিত। সকল শিক্ষানুরাগী মানুষ রাজ্যপালের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কিছু দিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদের নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করে হাসি হাসি মুখে বিবৃতি দিয়েছিলেন। এখন বলছেন, কোনও পাল বা কোনও সদনকে ঢুকতে দেবেন না। তা হলে আচার্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী কেন? কোনও পাল বা সদনকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া উচিত নয়, স্বশাসন থাকা উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই যুক্তিতেই ওই বিল ছিঁড়ে ফেলা উচিত রাজ্য সরকারের। তা না হলে সরকার যা করতে চাইবে, মানুষ তা ছিঁড়ে ফেলে দেবে!’’
আচার্য-বিল আটকে থাকার ফলে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দিনে অচলাবস্থার দিকে যাবে, সে দায় কার, এই প্রশ্ন তুলে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন আরও বলেছেন, ‘‘যিনি এটা ঘটাচ্ছেন, তিনি দায় নেবেন না। আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। কোনও মনোনীত মানুষ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আমরা সব সময়ই রাজভবন বা রাজ্যপালের সঙ্গে সহযোগিতা করেই চলতে চাই।’’ রাজ্যপাল কি ইচ্ছাকৃত ভাবে এই বিলে সই করছেন না? প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্য বলেন, ‘‘খবরে পড়ছি। আমি তো আর জ্যোতিষী নই!’’